ফ্রান্সে তৃতীয় দিনে দাঙ্গা: লুটপাট-সহিংসতা-অগ্নিসংযোগ নিয়ন্ত্রণে গ্রেফতার ৬৬৭
প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেলের মৃত্যুর ঘটনায় তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে দাঙ্গা। লুটপাট, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ সামাল দিতে এখন পর্যন্ত ৬৬৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ফ্রান্স পুলিশ। খবর বিবিসির।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে ফ্রান্সজুড়ে ৪০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল; যা আগের রাতের তুলনায় প্রায় চারগুণ। তবে পুলিশের শক্ত অবস্থান ও সরকারের একের পর এক আবেদনও বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে পারছে না।
প্যারিস ছাড়াও ফ্রান্সের মার্সেই, লিলি ছাড়া বহু শহরে বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে আতশবাজি নিক্ষেপ করছে এবং দোকান ভাঙচুর করছে।
এমনকি উত্তর আফ্রিকার আরব বংশোদ্ভূত এই কিশোর নিহতের ঘটনায় অনেকেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিওতে দেখা যায়, ২০২৪ অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্মাণাধীন একটি সুইমিং পুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
দেশটির বহু কমিউনিটি সেন্টার, সুপারমার্কেট, স্কুল ও সিটি হলেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্যারিসের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত আবারভিলিয়ার্স অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে দেখা গেছে।
ফ্রান্সের স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট্রাল প্যারিসের রুয়ে ডি রিভোলি স্ট্রিটকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি লুটপাট করা হয়েছে। একইসাথে ভাঙচুর করা হয়েছে ছোট ছোট দোকান ও জুয়েলারি শপ।
পরবর্তীতে এক ডজনেরও বেশি লোককে দোকান থেকে জুতা, ব্যাগ ও জামাকাপড় লুটপাট করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্যারিসের উপকণ্ঠে শ্রমজীবীদের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নাতেরে শহরতলিতে বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন ধরানো ও রাস্তায় ব্যারিকেডের পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলা করেছে।
অন্যদিকে মার্সেইতেও দোকান ও ক্যাফেগুলো হামলার স্বীকার হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি ছোট রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, "যে কিশোরটি মারা গিয়েছে, আমি তার জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এটার সাথে আমার ব্যবসা কীভাবে সম্পর্কিত।"
দেশটির লিডল সুপারমার্কেটে লুটপাট করা হয়েছে। অন্যদিকে রুবাইক্সে একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এএফটির তথ্য অনুযায়ী, কিছু দাঙ্গাকারী বিক্ষোভে ঘরে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করেছে।
নাহেলের মৃত্যুর ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের দুইজন কর্মকর্তা একটি গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে পুলিশের একজন গাড়ির জানালা দিয়ে চালকের দিকে অস্ত্র তাক করেন।
চালক গাড়ি চালানো শুরু করলে খুব কাছ থেকে গুলি করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ নাহেলকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
ঘটনার পর ভিডিও দেখে ৩৮ বছর বয়সী অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্তও শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের বিচার প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার অর্থ, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শামিল।
অন্যদিকে রয়টার্স জানায়, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে যত মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব বংশোদ্ভূত। চলতি বছর ফ্রান্সের ট্রাফিক তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে এ নিয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। আর এতেই ফ্রান্সে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক আরব ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথে সংকটকালীন বৈঠক করেছেন মাখোঁ। এরমধ্যেই ফ্রান্সের কিছু বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির আহ্বান জানালেও, তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নি।