এক সপ্তাহের মধ্যে তিনবার ভাঙল বিশ্বের উষ্ণতম দিনের রেকর্ড
বেসরকারি রেকর্ড বলছে, এক সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড করেছে। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি দলের বিশ্লেষণ করা তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ তাপমাত্রা গত সোমবার রেকর্ড হওয়া ১৭.০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবসৃষ্ট -জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনো নামে পরিচিত প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে থাকা আবহাওয়ার প্যাটার্ন দ্বারা তাপমাত্রা চালিত হচ্ছে।
স্প্যানিশ শব্দ 'এল নিনো'র অর্থ হলো 'লিটল বয়' বা 'ছোট ছেলে'। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়।
প্রতি তিন থেকে সাত বছরে এল নিনো ঘটে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানের সিনিয়র লেকচারার ফ্রিডেরিক অটো বলেন, 'জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে যাওয়ায় বিস্মিত নন, তবে আমরা খুব উদ্বিগ্ন।'
তিনি আরও বলেন, যারা মনে করেন বিশ্বের আরও তেল ও গ্যাসের প্রয়োজন, তাদের জন্য এটি সতর্কবার্তা।
এই সপ্তাহের আগে, তাপমাত্রার রেকর্ড শেষবার ভাঙা হয়েছিল ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, অনেক জনগোষ্ঠী এখনও অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং মানুষ ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়নি।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এই গরম অস্বাভাবিক এবং এই গ্রীষ্মে সম্ভবত গরমের রেকর্ডগুলো ভাঙা অব্যাহত থাকবে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানের লেকচারার ড. পাওলো সেপ্পি বলেন, এল নিনো এখনও চরমে ওঠেনি; উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্ম এখনও পুরোদমে চলছে। তাই ২০২৩ সালে দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ড বারবার ভেঙে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা অধিক থাকলে তাপপ্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে এবং দাবানল আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
চলতি বছরেই বিশ্বের উষ্ণতম জুন মাসের রেকর্ড করা হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকেই গবেষকেরা সমুদ্র ও স্থলভাগে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে চলতি সপ্তাহে চীন তীব্র তাপদাহের সম্মুখীন হচ্ছে।
চীনের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গিয়েছে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তাপদাহের ফলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার উত্তর আফ্রিকায় ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জলবায়ু গবেষক লিয়ন সিমন্স বলেন, "প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টি ক্রমবর্ধমান উষ্ণ পৃথিবীর জন্য একটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এখন এল নিনোর 'উষ্ণ পর্যায়' শুরু হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে যে, আগামী দেড় বছরে আরও বহু দৈনিক, মাসিক ও বাৎসরিক রেকর্ডের তৈরি হবে।"
বিশ্বে নানা অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব চরমভাবে অনুভূত হচ্ছে। চলতি বছরে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে উষ্ণতম জুন মাসের সাক্ষী হয়েছে। ইউক্রেনের ভারনাডস্কি রিসার্চ বেজের তথ্য অনুযায়ী, অ্যান্টার্কটিকায় জুলাই মাসের সর্বোচ্চ ৮.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অফ লাইপজিগের কারস্টেন হসটিন বলেন, "চলতি জুলাই মাস সর্বকালের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সর্বকালের বলতে ১২০,০০০ বছর আগে সুদীর্ঘ ইমিয়াম শুরুর সময়ের থেকে বলা হচ্ছে।"
কারস্টেন হসটিন আরও বলেন, "যদিও পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কিছুটা কমবে। তবে চলতি জুলাই এবং পরবর্তী আগস্ট মাসে আরও উষ্ণ দিন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কেননা এল নিনো এখন পুরোদমে চলছে।"