'এটি সত্যিই দুঃখজনক': জাস্টিন ট্রুডো ও সোফির বিচ্ছেদ ঘোষণায় তোলপাড় নেটদুনিয়া
দীর্ঘ ১৮ বছর সংসারের পর বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার। তাদের এই অপ্রাত্যাশিত বিচ্ছেদের ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই।
বুধবার (২ আগস্ট) প্রায় একই সময়ে নিজ নিজ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন জাস্টিন ও সোফি। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমগুলোতে শিরোনাম তৈরি করেছে তাদের বিচ্ছেদের খবর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর পাশপাশি তাদের সম্মিলিত এই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন। তবে এ বিচ্ছেদ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না সে প্রশ্নও জেগেছে অনেকের মনে।
প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো লিখেছেন, "অনেক অর্থবহ এবং জটিল আলোচনার পর আমি এবং সোফি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই সত্যটি আমরা সবাইকে জানাতে চাই।"
"আমরা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতো থাকব। আমাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য, আমরা আপনাদের প্রতি আমাদের এবং তাদের (সন্তানদের) ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।"
আরেক পৃথক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, জাস্টিন ট্রুডো এবং গ্রেগোয়ার ট্রুডো 'একটি আইনি বিচ্ছেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন' এবং 'নিরাপদ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশে তাদের সন্তানদের দেখভাল করার' বিষয়েও তারা সম্মত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্তানদের জীবনে বাবা-মায়ের অবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি থাকবে এবং এই পরিবারকে ভবিষ্যতে প্রায়শই একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। ট্রুডো পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করার অনুরোধ জানিয়েছে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরো পরিবার আগামী সপ্তাহে একসঙ্গে অবকাশ (ছুটি) কাটাবে।
এদিকে, বিচ্ছেদের খবরে ট্রুডো পরিবারের শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই ব্যথিত হয়ে সহানুভূতি জানিয়েছেন। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যক্তিগত জীবনের বোঝাপড়া ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক এমপিদের আশ্বাস করে জানিয়েছেন, ট্রুডো ভালো আছেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে হৈ চৈ তৈরির কিছু নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রুডোর অফিসের প্রাক্তন শীর্ষ কর্মী ড্যান আর্নল্ড লিখেছেন, "এটি সত্যিই দুঃখজনক, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য। এই সিদ্ধান্তের ব্যক্তিগত মূল্য অনেক বড়। আশা করি সবাই শ্রদ্ধাশীল হবেন।"
অনেকেই আবার ট্রুডো পরিবার সম্পর্কে সংবেদনশীল মন্তব্য বা যেকোনো ধরনের জল্পনার বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছেন।
বিচ্ছেদ একটি ব্যক্তিগত বিষয় হলেও এটি সন্দেহাতীতভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির রাজনৈতিক কৌশলবিদ ও ভাষ্যকার স্কট রিড। ট্রুডো ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেলদের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তার মতে, সাময়িকভাবে এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সেইসঙ্গে রিড আরও বলেছেন, "অন্তত আমরা যে তথ্যগুলো সম্পর্কে জানি তার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, বিষয়টি হয়তো অনেকেই বুঝতে পারবেন। আজকের দিনে দম্পতিরা আলাদা হয় এবং মানুষ এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়; তবে তার মানে এই নয় যে, তাদের জীবনের বাকি সবকিছু থেমে যাবে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।"
এদিকে, অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউট পোলিং ফার্মের সভাপতি শচি কার্ল মনে করেন, বিচ্ছেদের ঘোষণা নিয়ে মিডিয়ায় এত আলোচনা হওয়া উচিত নয়, যেহেতু এটি একজনের পারিবারিক ব্যাপার।
এ ঘটনায় জনমতের ওপর প্রভাব পড়তে পারে কি না- এ সম্পর্কে কার্ল বলেন, কানাডিয়ান রাজনৈতিক সংস্কৃতি 'রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে নয়।
তিনি বলেন, সুখী পরিবারের ধারণাটি হয়তো নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। কিন্তু এটি এমন কিছু নয় যার ওপর কানাডিয়ানরা অনেক বেশি গুরুত্ব দেন।
২০০৫ সালে বিয়ে করেন জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ার। তাদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের বড় সন্তানের বয়স ১৫ বছর।
১৯৭৭ সালে ট্রুডোর বাবা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের প্রায় ৪৬ বছর পর এই দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটলো।