ভাগনার প্রধানকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত, যাত্রীদের সবাই নিহত: রাশিয়া
রাশিয়ার মার্সেনারি বাহিনী ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনকে বহনকারী প্রাইভেট বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ঐ বিমানটিতে থাকা ১০ জনের সকলেই নিহত হয়েছেন।
আজ (বুধবার) তাস নিউজ এজেন্সি রাশিয়ান অ্যাভিয়েশন অথোরিটি রোজাভিয়াসিয়ার বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিমানে তিনজন ক্রু ও সাতজন যাত্রী ছিল।
রাশিয়ার কয়েকটি আউটলেটের মতে, বিধ্বস্ত বিমানটি এমব্রেয়ার লিগ্যাসি ৬০০ মডেলের। বিমানটির টেইল নম্বর ছিল আরএ-০২৭৯৫; যেটি প্রিগোজিন নিজে ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয় জানায়, প্রিগোজিনের বিমানটি কুজেনকিনো গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে উড্ডয়নের আধা ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটে।
আর ভাগনার গ্রুপের সাথে যুক্ত টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন জানায়, বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার আগে দুটি বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনতে পান, এরপর ধোঁয়ার দুটি রেখা দেখতে পান।
রোজাভিয়াসিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, "আজ রাতে মস্কোর উত্তরে তেভর অঞ্চলে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিহত যাত্রীদের যে তালিকা, সেখানে ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের নামও রয়েছে।"
এদিকে পুতিনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর গতকাল (মঙ্গলবার) প্রথমবারের মতো প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় দেখা গিয়েছিল ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনকে। প্রকাশিত ভিডিওটিতে ভাগনার বস দাবি করেছিলেন, তিনি আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থান করছেন।
এছাড়াও গত মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকা-রাশিয়া সামিটে প্রিগোজিনকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের প্রেসিডেন্সিয়াল উপদেষ্টা ও অ্যাম্বাসেডর ফ্রেডি মাপুকার সাথে ভাগনার বসের হ্যান্ডশেক করা ছবিও প্রকাশিত হয়।
গত জুলাই মাসে বিদ্রোহের পর থেকে নিজেকে অনেকটা আড়ালেই রেখেছিলেন প্রিগোজিন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা টিকে থাকা বিদ্রোহে গ্রুপটি দক্ষিণ রাশিয়ার শহর রোস্তভে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। যদিও পরবর্তীতে বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে এসেছিল ভাগনার গ্রুপ।
এদিকে বিদ্রোহের পর গত ২৬ জুন পুতিন অবশ্য বলেছিলেন, "ভাগনার বিদ্রোহের কুশীলবরা সেনাদের অন্ধকারে রেখেছিল এবং অস্ত্র হাতে সেনাদের নিজেদের ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল। অথচ এই সেনারাই দেশের জন্য ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাদের ভাইদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে।"
একইসাথে শেষ সময়ে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় ও নিজেদের মধ্যে রক্তপাত এড়ানোয় পুতিন ভাগনার সেনা ও কমান্ডারদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। ভাগনার গ্রুপকে বিচারের আওতায় না আনার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি তা রক্ষা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন।
পুতিনের নয় বছর পর ১৯৬১ সালে লেনিনগ্রাদে (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) জন্মগ্রহণ করেন প্রিগোজিন। ভাগনার বসের যৌবনের এক দশক কেটেছে কারাগারে, ডাকাতির অপরাধে। সেখান থেকে বেরিয়ে হয়েছেন হটডগ বিক্রেতা। পরে করেছেন খাবার সরবরাহের কাজ। সেই তিনিই জীবনের এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন দুর্ধর্ষ ভাড়াটে যোদ্ধাদের গ্রুপ ভাগনার।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে অংশ নিয়েছিল ভাগনার গ্রুপ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ত্র সরবরাহে ঘাটতির অভিযোগ তুলে রাশিয়ার সামরিক নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন ভাগনার বস প্রিগোজিন। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সামরিক-প্রধানের সঙ্গেও প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তারই চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।