ভিসা বিলম্বে বাংলাদেশি পর্যটক কমে যাওয়ায় কলকাতার নিউ মার্কেটে ব্যবসায় মন্দা
চলতি বছরের গ্রীষ্মে কলকাতার নিউ মার্কেটের মিনি-বাংলাদেশ খ্যাত এলাকায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যায় ধস নেমেছে। এর ফলে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। বাংলাদেশি ক্রেতার অভাবে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাণিজ্য কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশি নাগরিকরা টাইমস অভ ইন্ডিয়াকে জানান, বর্তমানে ভারতীয় ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগছে ৯০ দিনের বেশি। অথচ আগে এই সময় ছিল মাত্র ১৫ দিনের মতো। এটি কলকাতায় বাংলাদেশি ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
আয়েশা আমির নামে একজন বাংলাদেশি টাইমস অভ ইন্ডিয়াকে জানান, তিনি বেশ কয়েকবার ভারত ভ্রমণ করেছেন। গত জুলাইয়ে তিনি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার সময় পেয়েছেন দুই মাস পর, গত বৃহস্পতিবার। 'ভিসা-প্রক্রিয়ায় কখনও এত দেরি হতে দেখিনি আমি,' আয়েশা বলেন।
কলকাতার স্থানীয় ব্যবসা সংগঠনগুলো বলছে, প্রতিদিন সাধারণত ৬ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কলকাতা যান। শীত মৌসুমে সেই সংখ্যা দৈনিক ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু ভিসা কড়াকড়ির কারণে এখন দিনে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটক কলকাতা যাচ্ছেন।
কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এফএসএসটিএ) যুগ্ম সম্পাদক মো. সাইফ শামীম বলেন, 'আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের ব্যবসা সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।'
বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিলম্ব হওয়ার সমস্যাটি নিয়ে এফএসএসটিএ গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখেছে।
এফএসএসটিএর সভাপতি এবং কলকাতা-ঢাকায় চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের পরিচালক মনোতোষ কুমার সাহা বলেন, গত ১৫ দিনে ৪৫ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার বাসগুলো মাত্র ১২ থেকে ১৪ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতায় পৌঁছাচ্ছে।
কলকাতা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের মালিক অবনি কুমার ঘোষ জানান, তাদের ৪৫ সিটের বাসগুলোর যাত্রী এখন অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, 'বাস চালানো আর্থিকভাবে অলাভজনক হয়ে পড়েছে।'
ভিসা প্রক্রিয়ার বিলম্বের বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠি লিখেছেন মানবাধিকার কর্মী উৎপল রায়। তিনি বলেন, 'এখন ৯০ দিনের কমে ভারতীয় ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। অনলাইনে আবেদনের অন্তত ৪৫ দিন পর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে।'
এ বিষয়ে টাইমস অভ ইন্ডিয়া ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে মেইল পাঠালেও জবাব পায়নি। আর এটি ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত এক দশক ধরে নিউ মার্কেট এলাকায় একটি বড় রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন বিকাশ কুমার যাদব। তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কলকাতায় [বাংলাদেশি] পর্যটকের প্রবাহ বাড়বে, এমন আশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।'
এফএসএসটিএর যুগ্ম সম্পাদক শামীম বলেন, বাংলাদেশিরা এখন কলকাতাকে পাশ কাটিয়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করতে যাচ্ছে।
কিছু ব্যবসায়ী অবশ্য আগামী মাসে ব্যবসা বাড়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। শ্যামলী পরিবহনের মালিক অবনি কুমার ঘোষ বলেন, 'অক্টোবরে ইডেন গার্ডেনসে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা আছে। তখন পর্যটকের সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে।'