কানাডায় নিহত হওয়া শিখ অ্যাক্টিভিস্ট হরদীপ সিং নিজ্জার কে ছিলেন?
শিখ অভিবাসীদের অন্যতম গন্তব্য কানাডা। শিখ অ্যাক্টিভিজমের একটি অংশের উৎসও এ দেশ। খালিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে শিখরা ভারতে খালিস্তান নামক আলাদা একটি শিখরাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। হরদীপ সিং নিজ্জার এ আন্দোলনের সম্মুখভাগে ছিলেন।
গত জুনে কানাডায় নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কানাডার সরকার বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের যোগ রয়েছে।
হরদীপ সিং নিজ্জার কে ছিলেন?
পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণকারী নিজ্জার কানাডায় প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করছিলেন। ৪৫ বছর বয়সী এ শিখ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরের গুরু নানক শিখ গুরুদুয়ারার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
পাঞ্জাবে খালিস্তান বানানোর আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন নিজ্জার। ভারত সরকার তাকে 'জঙ্গী' তকমাও দিয়েছিল। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারত তার গ্রেপ্তানি পরোয়ানাও জারি করে।
২০১৬ সালে ইন্টারপোলের এক নোটিশে অভিযোগ করা হয়, ২০০৭ সালে পাঞ্জাবের একটি সিনেমা হলে বোমা হামলার অন্যতম 'প্রধান ষড়যন্ত্রকারী' ছিলেন নিজ্জার।
নিহত হরদীপ সিং নিজ্জারের এক স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে বলে কানাডার বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে।
যেভাবে খুন হন নিজ্জার
২০২৩ সালের ১৮ জুন সন্ধ্যায় রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কাছে খবর আসে, গুরু নানক শিখ গুরুদুয়ারায় গোলাগুলি হয়েছে। নিজ্জারের পিকআপ ট্রাককে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান গাড়ির ভেতর থাকা নিজ্জার।
মুখোশ পরিহিত দোহারা গড়নের দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বলে জানা যায়। গত মাসে কানাডার পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৃতীয় একজন জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহ করা হচ্ছে যিনি বাকি দুইজনকে গাড়িতে করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
কানাডিয়ান গোয়েন্দাসংস্থা নিজ্জারকে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল — স্থানীয় গণমাধ্যমকে এমনটাই জানান তার বন্ধুরা।
নিজ্জারের আইনজীবী গুরপত্বন্ত সিং পান্নুম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, তার বিশ্বাস খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই নিজ্জারকে লক্ষ্য করা হয়েছিল।
এ মামলার বিষয়ে ট্রুডো যা বলছেন
কানাডার আইনপ্রণেতাদেরকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার জানান, নিজ্জারের মৃত্যুর তদন্ত কার্যক্রম কানাডা এর মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করছে এবং কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ এ হামলার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের সংযোগের বিষয়ে 'বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ' যাচাই করে দেখছে।
ট্রুডো বলেন, 'কানাডার মাটিতে কানাডার কোনো নাগরিক হত্যায় কোনো বিদেশি সরকারের জড়িত থাকা অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।'
তার এ বিষয়ে 'গভীর উদ্বেগের' কথা ভারতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে জানান ট্রুডো। এছাড়া এ মাসে জি-২০ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও 'সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে' বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তিনি।
এ ঘটনায় ভারত-কানাডা সম্পর্কে প্রভাব
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ভারতীয় একজন কূটনৈতিকের বহিষ্কারাদেশ দিয়েছেন। ওই কূটনীতিবিদকে তিনি কানাডায় ভারতীয় গোয়েন্দার 'প্রধান' বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ নিউ ইয়র্কে এ সপ্তাহে চলা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও আলোচনা করা হবে।
কানাডার জননিরাপত্তামন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাংক বলেন, কানাডার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিগত সপ্তাহগুলোতে ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে কয়েকবার ভারত গিয়েছেন।
কানাডার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সপ্তাহে তারা মুম্বাইয়ে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিত আগামী মাসে হতে যাওয়া একটি বাণিজ্য মিশন বাতিল করেছে এবং বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ভারতও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার একজন কূটনীতিবিদকে বহিষ্কার করেছে। যদিও ভারত সরকার ওই কূটনৈতিকের নাম প্রকাশ করেনি, তবে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ওই কূটনীতিক ছিলেন নয়াদিল্লিতে কানাডার গোয়েন্দা স্টেশনের প্রধান।
ভারত সরকার কী জবাব দিয়েছে?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কানাডার অভিযোগকে 'অ্যাবসার্ড' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জি-২০ সম্মেলনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'কানাডায় উগ্রবাদীদের ভারত-বিরোধী নিরবচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডের' বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা [উগ্রবাদী] বিচ্ছিন্নতাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং সহিংসতা উসকে দিচ্ছে'।