বেতন পাবেন না আম্বানির সন্তানেরা!
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের কমিটির সভায় অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির তিন সন্তান সম্মানী পেলেও আলাদা করে কোনো বেতন তাদের দেওয়া হবে না। আকাশ, ইশা ও অনন্ত আম্বানিকে পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সম্প্রতি শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন চেয়েছে রিলায়েন্স।
২০২০-২১ অর্থবছর থেকে মুকেশ আম্বানি (৬৬) নিজেও অবশ্য বেতন নেয়া বন্ধ রেখেছেন। তবে তার চাচাতো ভাই নিখিল ও হিতাল বেতন, ভাতা, কমিশন ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা পান।
মুকেশ আম্বানির তিন সন্তান- যমজ আকাশ ও ইশা (৩১) এবং অনন্ত (২৮ বছর) শুধুমাত্র পর্ষদ ও কমিটির সভায় অংশগ্রহণের জন্য সম্মানী এবং কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে কমিশন পাবেন।
২০১৪ সালে মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানিকেও একই আদলে পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নীতা আম্বানি পর্ষদের সভায় অংশগ্রহণের সম্মানী হিসেবে ৬ লাখ রুপি এবং কমিশন হিসেবে ২ কোটি রুপি পেয়েছেন।
গত মাসে কোম্পানির বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় মুকেশ আম্বানি ঘোষণা করেন যে তার তিন সন্তান আকাশ, ইশা এবং অনন্তকে রিলায়েন্সের পরিচালনা পর্ষদে (বোর্ড অব ডিরেক্টরস) অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তিনি আরও জানান, পরবর্তী নেতৃত্বের 'গ্রুমিং' এবং ক্ষমতায়নে জোর দিতে তিনি আরও পাঁচ বছর কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও পদে বহাল থাকবেন।
এদিকে মুকেশ আম্বানির সন্তানদের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগের অনুমোদন নিতে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ডাকযোগে ব্যালট পাঠিয়েছে রিলায়েন্স।
নোটিশে বলা হয়েছে, মুকেশ আম্বানির সন্তানেরা শুধু পর্ষদ ও কমিটির সভায় অংশগ্রহণের জন্য সম্মানী ও মুনাফাসংক্রান্ত কমিশন পাবেন।
রিলায়েন্সের পাঁচটি বৃহৎ অংশ রয়েছে: তেল-রাসায়নিক ব্যবসা (ওটুসি), টেলিকম ও ডিজিটাল বাণিজ্য, খুচরা বিক্রয় (ভৌত এবং অনলাইন), জ্বালানি এবং সম্প্রতি চালু করা আর্থিক সেবা।
২০২২ সালে মুকেশ আম্বানি প্রথম উত্তরাধিকার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি জানান যে তার তিন সন্তানের প্রত্যেকে কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগের প্রধান হবেন। যেমন-আকাশ টেলিকম প্রধান, ইশা খুচরা বিক্রয় বিভাগের প্রধান এবং অনন্ত সামলাবেন জ্বালানী বিভাগ।
তবে রিলায়েন্সের মূল ভিত্তি, অর্থাৎ তেল-রাসায়নিক বা ওটুসির দায়িত্ব নেবেন কে, সেটি তখন প্রকাশ করা হয়নি।
গত মাসে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় ভারতের সবচেয়ে 'ভ্যালুয়েবল' কোম্পানির প্রধান হিসেবে মুকেশ আম্বানিকে আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত আরও পাঁচ বছরের মেয়াদে থাকতে সম্মতি দেন রিলায়েন্স শেয়ারহোল্ডাররা। বিগত তিন বছরের মতো, এবারের মেয়াদেও তিনি কোনো বেতন-ভাতা নেবেন না।
উত্তরাধিকার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে নীতা আম্বানি রিলায়েন্সের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নিলেও তার জন্য পর্ষদের সকল সভায় স্থায়ী আমন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; এমন মর্যাদা পর্ষদের আর কারো ভাগ্যে জোটেনি! মুকেশ আম্বানি এবং অন্যান্য পরিচালকদের মেয়াদ বর্ধিতকরণের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন লাগলেও নীতা আম্বানি তাই এসবের ঊর্ধ্বে। তিনি সব সময় পর্ষদের সভায় অংশ নিতে পারবেন।
মুকেশ আম্বানির একমাত্র মেয়ে, ইশা আম্বানি ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে সাইকোলজি এবং সাউথ এশিয়া স্টাডিজে গ্র্যাজুয়েশনের পর স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন।
নোটিশে বলা হয়, তিনি রিলায়েন্স রিটেলের নতুন বিভাগ সম্প্রসারণে কাজ করছেন।
কোম্পানির ০.১২ শতাংশ ইক্যুইটি শেয়ার ইশার। অন্যদিকে রিলায়েন্সের ৪১.৪৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক মুকেশ আম্বানি।
আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক আকাশ আম্বানি ভারতের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি জিও-এর প্রধান। নোটিশে আকাশের ব্যাপারে বলা হয়েছে, "জিও-তে তিনি ফাইভ-জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইনের মতো নতুন যুগের প্রযুক্তির সমন্বয়ে পণ্য এবং পরিষেবা তৈরিতে নেতৃত্ব দেন।"
মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানিও ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্নাতক। অনন্তের পরিচালনায় রিলায়েন্স তার নবায়নযোগ্য এবং গ্রিন এনার্জির বৈশ্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে নোটিশে উল্লেখ আছে।
২০১৪ সাল থেকে আকাশ এবং ইশা উভয়েই জিও আর রিলায়েন্স রিটেলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। নিউ এনার্জি বা জ্বালানী বাণিজ্য পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর পর্ষদের পাশাপাশি, অনন্ত আম্বানিও জিও আর রিলায়েন্সের পর্ষদের অংশ। পাশাপাশি ইশাকে জিও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর বোর্ডে ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
মুকেশ আম্বানি ১৯৭৭ সাল থেকে রিলায়েন্সের পর্ষদে রয়েছেন; ২০০২ সালের জুলাইয়ে পিতা এবং রিলায়েন্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর পর কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে উন্নীত হন মুকেশ।
২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত, এগারো বছর তার বার্ষিক সম্মানী ১৫ কোটি রূপিতে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি শেষে কোম্পানি আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, ২০২১ সাল থেকে তিনি বেতন নেয়া বন্ধ করে দেন।
সে অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে শুরু করে পরবর্তী টানা তিন বছর তাকে কোনো বেতন এবং মুনাফা সংক্রান্ত কমিশন দেওয়া হয়নি।