মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলেন ‘চীনপন্থী’ মুইজ্জু
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন 'চীনপন্থী' নেতা হিসেবে পরিচিত মোহামেদ মুইজ্জু। শতকরা ৫৪ ভাগ ভোট পেয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিতম মোহমেদ সলিহকে পরাজিত করেছেন তিনি। খবর বিবিসির।
বর্তমান মেয়াদে মোহমেদ সলিহ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মালদ্বীপ সরকার ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছিল। ইতোমধ্যেই তিনি নিজের পরাজয় মেনে নিয়ে প্রতিপক্ষ মুইজ্জুকে স্বাগত জানিয়েছেন। দেশটির নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণার পরই তিনি এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে অভিনন্দন জানান।
গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় নির্বাচনে এককভাবে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ফলে এ নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায় (রানঅফ), যার ফলাফলে জয়ী হলেন মুইজ্জু। প্রথম দফার নির্বাচনে মুইজ্জু পেয়েছিলেন ৪৬ শতাংশ ভোট। আর সলিহ ৩৯ শতাংশ।
মুইজ্জু মূলত প্রগ্রেসিভ পার্টি অব দ্য মালদ্বীপের (পিপিএম) নেতৃত্বাধীন জোট থেকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করেছেন। এর আগে তিনি রাজধানী মালের মেয়ের ছিলেন। তার ক্যাম্পেইনের অন্যতম স্লোগান ছিল 'ইন্ডিয়া আউট'।
আপাতত তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ৬১ বছর বয়সী মোহমেদ সলিহ। আগামী ১৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন মুইজ্জু।
মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের সাথে সুসম্পর্ক জোরদার করেছিলেন মোহমেদ সলিহ। একইসাথে দিল্লির সাথে মালে বেশ ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। এটিকে তিনি 'ইন্ডিয়া ফাস্ট' পলিসি হিসেবে অভিহিত করেন।
অপেক্ষাকৃত কম শক্তিধর দেশ মালদ্বীপ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বলয়ে রয়েছে। এতে করে দিল্লি খুব সহজেই ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব রাখতে পেরেছিল।
অন্যদিকে মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরের মাঝখানে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। ৪৫ বছর বয়সী নবনির্বাচিত মুইজ্জুর চীনের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
প্রতিনিয়ত নৌ-শক্তিতে শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করতে থাকা চীন ভারত মহাসাগরের কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া। তাই চীন ও ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এমতবস্থায় মালদ্বীপে 'চীনপন্থী' নেতার জয় ভারতের জন্য স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। একইসাথে গালফ অঞ্চল থেকে জ্বালানী সরবারাহের জন্য বেইজিংয়ের এই অঞ্চলে কর্তৃত্ব স্থাপন জরুরী।
গত দশকে ভারতের পক্ষ থেকে মালদ্বীপকে দুইটি হেলিকপ্টার ও একটি ছোট এয়ারক্রাফট দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতীয় এয়ারক্রাফটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ৭৫ জন ভারতীয় সেনা দেশটিতে অবস্থান করছে।
সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে 'ইন্ডিয়া আউট' ক্যাম্পেইন চালু করা হয়। যার অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনাদের দেশটি ত্যাগের দাবি তোলা হয়।
মোহমেদ সলিহ এর পূর্বে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছিলেন প্রোগ্রেসিভ পার্টির আরেক নেতা আবদুল্লাহ ইয়ামিন। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মালদ্বীপের সাথে চীনের সম্পর্ক আর ঘনিষ্ঠ হয়।
তৎকালীন সময়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেয় মালদ্বীপ। একইসাথে বড় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে দেশটি বিপুল ঋণ আদায় করে।
আব্দুল্লাহ ইয়ামিন বর্তমানে দুর্নীতির দায়ে জেলে ১১ বছরের সাজা ভোগ করছেন। তাই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। এদিকে নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই দলের কারাবন্দি সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের মুক্তি দাবি জানিয়েছেন মুইজ্জু।
ফলাফল ঘোষণার পর থেকে মালদ্বীপ জুড়ে শুরু হয়েছে পিপিএম কর্মীদের আনন্দ-উল্লাস। মুইজ্জুর হাজার হাজার সমর্থকেরা দলটির হেডকোয়ার্টারের সামনে জয় উদযাপনের জন্য জড়ো হয়েছেন।
১৯৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করা মুইজ্জু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর যুক্তরাজ্যের লীডস ইউনিভার্সিটির থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ২০১২ সালে গৃহায়ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি মালদ্বীপের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
২০১৩ সালে ইয়ামিন ক্ষমতায় আসলে দায়িত্বে বহাল থাকেন মুইজ্জু। তখন তিনি মালের সাথে বিমানবন্দরে সহজে যোগাযোগের জন্য ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায়ে ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেন। একইসাথে বেশ কিছু বড় বড় প্রজেক্টও হাতে নেয়। তিনি ২০২১ সালে চমক হিসেবে পিপিএম-এর পক্ষ থেকে প্রথমবারে মতো মালের মেয়র নির্বাচনেও জয়লাভ করেন।