জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ব্যবহারের পরামর্শ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
জাপানের ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ডেঙ্গু প্রতিরোধী ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের জন্য বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খবর নিপ্পন ডট কমের।
'কিউডেঙ্গা' নামের টিকাটি ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৬-১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই টিকা চালু করা হবে, যারা তীব্র ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং যাদের বাস উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বিরুদ্ধে উপযোগী টিকা নিয়ে সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিন। টিভি-০০৫ নামের টিকাটি এক ডোজের বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে ডেঙ্গুর এই টিকা ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষণায় ব্যবহৃত এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায়, এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর আকার ও তীব্রতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ বছরের চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর।
১৯৯৭ সালে ফরাসি বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা সানোফি একটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু করে; ২০১৫ সালে 'ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া' নামে ওই ভ্যাকসিনটি মেক্সিকোতে অনুমোদন পায়।
এরপর শীঘ্রই ১৯টি দেশে চালু হয় ওই ভ্যাকসিন। কিন্তু পরে সানোফির আরেক গবেষণায় দেখা যায়, কিছু বিরল ক্ষেত্রে ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া উল্টো বিপর্যয় ঘটাতে পারে। যাদের কখনও ডেঙ্গু হয়নি তাদেরকে টিকা দেওয়ার পর তারা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন, তবে ভ্যাকসিনটি অনেকক্ষেত্রেই রোগটিকে আরও গুরুতর করে তুলতে পারে।
২০১৩ সালে ইনভিরাজেন ইনক নামে কলোরাডোর একটি কোম্পানি কিনে নেয় তাকেদা। এই কোম্পানিই কিউডেঙ্গা নিয়ে কাজ শুরু করে। এর কার্যকারিতা এবং সুরক্ষাব্যবস্থা প্রমাণ করা বেশ জটিল ছিল, কারণ ডেঙ্গুর চারটি আলাদা আলাদা ধরন রয়েছে; ভ্যাকসিনটি স্বতন্ত্র চার ধরনের বিরুদ্ধেই সুরক্ষা দিতে পারে কিনা তা জানা ছিল আবশ্যক। কিছুক্ষেত্রে আবার যে সমস্ত রোগী একাধিকবার ভিন্ন স্ট্রেইনে (ধরন) সংক্রমিত হন, তাদের মাঝে আরও গুরুতর উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারণ প্রথম সংক্রমণ থেকে তৈরি নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসের সঙ্গে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলে কোষে প্রবেশের ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
যদিও এটি স্পষ্ট নয়, কিছু গবেষক বলেছেন, একই রকম বিষয় ঘটতে পারে টিকা দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যেও। সম্ভবত এটিই ডেঙ্গভ্যাক্সিয়ার বিপর্যয় ঘটানোর মূল কারণ।
অন্যদিকে তাকেদার দুইডোজের ভ্যাকসিনটি সেরোটাইপ ২ ভেরিয়েন্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে এখানে অন্য তিনটি ধরনের উপাদানও যুক্ত রয়েছে। ডোমিনিকান রিপাবলিক, পানামা এবং ফিলিপাইনে ১ হাজার ৮০০ জন তরুণ-তরুণীর ওপর চালানো হয়েছে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা। গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি নেওয়ার পর এটি ডেঙ্গুর চার ধরনের বিরুদ্ধে অন্তত চার বছর সুরক্ষা দেয়।
এই ফলাফলের পর এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার ২০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবীর ওপর আরেকটি পরীক্ষা চালায় তাকেদা। দেখা যায়, ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার প্ল্যাসিবোর তুলনায় ৮৪ শতাংশ কম এবং এটি ৬১ শতাংশ পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। এর পাশাপাশি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকিও পাওয়া যায়নি পরীক্ষায়।