আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প; অন্তত ২ হাজার জন নিহতের আশঙ্কা
আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২ হাজার জন নিহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তালেবান সরকারের মুখপাত্র আজ (রবিবার) এই তথ্য জানান।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় সবচেয়ে বড় শহর হেরাত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। গতকাল (শনিবার) স্থানীয় সময় সকাল ১১ টার দিকে হওয়া এ ভূমিকম্পে বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বহু মানুষ।
শুধু তাই নয়, প্রথমবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর অন্তত তিনটি শক্তিশালী আফটারশকের ঘটনা ঘটেছে। হেরাত স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন হাসপাতালে ২০০ এরও বেশি মরদেহ আনা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথমদিকে যদিও নিহতের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম বলে জানা যায়। কিন্তু উদ্ধারকাজ পুরোপুরিভাবে শুরু হওয়ার পর নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রথমদিকে ৩২০ জন নিহতের খবর জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই সংখ্যাটি যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানানো হয়।
অন্যদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমদিকে প্রায় ১০০ নিহত ও ৫০০ জন আহতের কথা জানিয়েছিল। একইসাথে প্রাথমিকভাবে ৪৬৫ টি ভবন ধ্বংস এবং ১৩৫ টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।
ভূমিকম্পটি সম্পর্কে হেরাত শহরের অধিবাসী বশির আহমেদ বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেন, "আমরা অফিসে ছিলাম। হুট করে দেখি ভবনটি কাঁপতে শুরু করল। দেয়ালের প্লাস্টার খুলে খুলে পড়ছিল। ধীরে ধীরে দেয়াল ও ভবনের কিছু অংশ ভেঙে পড়ছিল।"
বশির আহমেদ আরও বলেন, "আমি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমি খুব চিন্তিত এবং ভীত। এটা বেশ ভয়ঙ্কর অবস্থা।"
হেরাত সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অসংখ্য আহত ব্যক্তিকে মূল বিল্ডিংয়ের বাইরেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যা থেকেই অনুমান করা যায় যে, ভূমিকম্পে আহত বহু মানুষকে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতটা হিমশিম খাচ্ছে।
অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, হেরাতের গসপেল জেলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলির ফলে সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপের কারণে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে উদ্ধার প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ভূমিকম্প শুরুর পর শিক্ষার্থী ইদ্রিস আরসালা ছিল শেষ ব্যক্তি, যিনি তার ক্লাসরুম থেকে নিরাপদে বের হতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, "পরিস্থিতি খুব ভয়ঙ্কর ছিল। আমি কখনও এমনটা অভিজ্ঞতা করিনি।"
ইরান সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে হেরাত শহরটি অবস্থিত। এটিকে আফগানিস্তানের 'সাংস্কৃতিক নগরী' হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ২০১৯ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৯ লাখ মানুষ শহরটিতে বসবাস করে।
আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হেনে থাকে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালার দিকে এটি বেশি অনুভূত হয়। কেননা এটি ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত।
গত বছরের জুনেও দেশটির পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার-হাজার মানুষ গৃহহীন হয়।