কারাবন্দী অবস্থায় শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন যে ৫ জন
২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কারাগারে থাকা ইরানের নারী অধিকারকর্মী এবং সাংবাদিক নার্গিস মোহাম্মদী (৫১)।
নার্গিস নারীর অধিকার এবং মৃত্যুদণ্ড বিলোপের ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে আরও রয়েছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো।
এছাড়াও ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শিরিন এবাদির নেতৃত্বাধীন অলাভজনক সংস্থা ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস সেন্টার-এর উপপ্রধান নার্গিস মোহাম্মদী।
একাধিক রায়ে বর্তমানে ইরানের এভিন প্রিজনে মোট ১২ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন মোহাম্মদী। এর আগেও তাকে একাধিকবার কারাগারে নিয়েছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ।
তবে শুধু নার্গিস মোহাম্মদীই নন, কারাবন্দী অবস্থায় শান্তিতে এর আগে নোবেল পেয়েছেন আরও চারজন।
১৯৩৫: কার্ল ফন ওসিয়েৎস্কি, জার্মানি
১৯৩৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন জার্মান সাংবাদিক ও শান্তিবাদী কার্ল ভন ওসিয়েৎস্কি।
সে সময় তিনি একটি নাৎসি বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন; এমনকি নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে অসলোতেও যেতে পারেননি।
নোবেল প্রাপ্তির তিন বছর আগে, রাইখস্ট্যাগ অগ্নিকাণ্ডের পর অ্যাডলফ হিটলার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে ফন ওসিয়েৎস্কি গ্রেপ্তার হন। শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটিতে ভূষিত হন।
অন্যদিকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে এডলফ হিটলার জার্মানির নাগরিকদের যেকোনো বিভাগে নোবেল গ্রহণ করতে নিষেধাজ্ঞা দেন।
ওসিয়েৎস্কি নিজে তার পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ করতে না পারলেও একজন জার্মান আইনজীবী কৌশলে তার হয়ে সেটি গ্রহণ করে নেন।
১৯৩৮ সালে বন্দী অবস্থায়ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নোবেলজয়ী।
১৯৯১: অং সান সু চি, মিয়ানমার
১৯৯১ সালে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতেন, তখন তিনি বার্মায় গৃহবন্দী।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অহিংস আন্দোলনের জন্য নোবেলজয়ী সু চির আশংকা ছিল, একবার বার্মা থেকে বেরোলে সামরিক জান্তা তাকে আর দেশে ফিরতে দেবে না; তিনি তাই অসলোতে তখন পুরস্কার গ্রহণ করতে যাননি।
সু চির পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার দুই ছেলে ও স্বামী। তবে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে সু চির স্মরণে প্রতীকীভাবে একটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়।
অবশেষে ২০১২ সালে সু চি-র হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ফের ক্ষমতা দখল করে নেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর বিভিন্ন মামলায় সু চিকে মোট ৩৩ বছর কারাদণ্ড দেয় সামরিক আদালত।
২০১০: লিউ শিয়াওবো, চীন
২০১০ সালে জেলে থাকা চীনা ভিন্নমতাবলম্বী লিউ শিয়াওবো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
গণতন্ত্রপন্থী লিউকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চলা লড়াই ও অহিংস আন্দোলনের জন্য সম্মানিত লিউয়ের স্মরণে নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রতীকীভাবে একটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছিল; এবং পুরস্কারটি কাউকেই হস্তান্তর করা হয়নি।
এছাড়াও পুরস্কার ঘোষণার পর তার স্ত্রী লিউ শিয়াকে গৃহবন্দী করা হয় ও তিন ভাইকে চীন ত্যাগে বাধা দেওয়া হয়।
লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ৬১ বছর বয়সে চীনের একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লিউ দ্বিতীয় নোবেলজয়ী, যিনি কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান।
২০২২: অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি, বেলারুশ
২০২১ সালের জুলাই থেকে কারাগারে থাকা বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি, পরের বছরই শান্তিতে নোবেল পান। রাশিয়ার মেমোরিয়াল গ্রুপ ও ইউক্রেনের মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস-এর সঙ্গে ২০২২ সালে শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন অ্যালেস।
তিনি বেলারুশের অন্যতম অধিকার গোষ্ঠী ভিয়াসনার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেলারুশে প্রচণ্ড বিক্ষোভ চলে; দীর্ঘদিনের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেংকো সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরও এক মেয়াদে বেলারুশে ক্ষমতায় আসেন।
সে বিক্ষোভের জের ধরে পরের বছর অ্যালেস ও তার কয়েকজন সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অ্যালেসের হয়ে তার স্ত্রী নাতালিয়া পিনচুক পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
চলতি বছরের মার্চে অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অ্যালেসের সাথে ভিয়াসনার অন্যান্য সদস্যদেরও কারাগারে পাঠানো হয়।