দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে এবার গাজার বাসিন্দাদের ৬ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিল ইসরায়েল
গাজা শহরের ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গতকাল (শুক্রবার) আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলেছিল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। খবর বিবিসির।
এবার আজ (শনিবার) স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা থেকে বেলা ৪ টা পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দুটি রাস্তা ব্যবহার করে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আইডিএফ।
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স (প্রাক্তন টুইটার) এ আইডিএফের মুখপাত্র অভিচয় আদরাই আরবি ভাষায় লেখা এক পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
একইসাথে আইডিএফের নির্দেশকৃত রাস্তাগুলো ব্যবহার করে যাতায়াত করলে বেসামরিক নাগরিকদের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন আদরাই।
গাজার সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী যুদ্ধাস্ত্র সমবেত করেছে আইডিএফ। ধারণা করা হচ্ছে যে, খুব শীঘ্রই গাজায় স্থল আক্রমণ করবে ইসরায়েল।
এক্ষেত্রে গাজা সিটিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বেইট হানুন (ইসরাইলিদের কাছে এরেজ নামে পরিচিত) দিয়ে দক্ষিণে খান ইউনিসে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইডিএফ।
আর সমুদ্রের কাছাকাছি ও অলিভের পশ্চিমে বসবাসকারী বাসিন্দাদের দালদুল এবং আল-সানার রাস্তা ব্যবহার করে সালাহ আল-দ্বীন এবং আল-বাহরের দিকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। গতকাল (শুক্রবার) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ গণমাধ্যমে বলেন, "আমরা সকলের সাথে যোগাযোগ করছি। আমাদের হামাসের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে।"
সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকেই বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। একইসাথে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে মস্কোর একটি প্রতিনিধিদলের মধ্যপ্রাচ্যে সফরের সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বোগদানভ মনে করেন, গাজা উপত্যকায় জিম্মি অবস্থায় থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির বিষয়টি 'খুব সাবধানে' এবং সহিষ্ণুতার সাথে' সমাধান করতে হবে। একইসাথে ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার ইসরায়েলের ঘোষণাকে 'মানবধিকারের লঙ্ঘন' বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
আর গাজা উপত্যকাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খোলার সম্ভবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ইরান।
লেবানন সফরকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, "গাজায় চলমান আগ্রাসন, যুদ্ধাপরাধ ও অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খোলার বাস্তবিক সম্ভাবনা আছে।" তার এ বক্তব্য হামাস-ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে, গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযানে গেলে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হতে পারে, যা হবে 'একেবারেই অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পুতিন বলেন, "রাশিয়া গঠনমূলকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রস্তুত। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত বন্ধে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে এগোতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হানাহানির অবসান করতে পারবে।"
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধে ক্রমেই বেড়ে চলেছে নিহতের সংখ্যা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০০ শিশু ও ২৭৬ জন নারীসহ ১,৫৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৬,৬১২ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১৩০০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৩২০০ জন।