'আমরা এখানেই মর্যাদার সাথে মরব': উত্তর গাজাবাসী
গাজা শহরের ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গত শুক্রবার আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলেছিল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
আবার গতকাল (শনিবার) স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা থেকে বেলা ৪ টা পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দুটি রাস্তা ব্যবহার করে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার ফের নির্দেশনা দিয়েছে আইডিএফ।
কিন্তু ইসরায়েলের এমন নির্দেশনার পর ঠিক কত সংখ্যক ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা ত্যাগ করেছে আর কত সংখ্যক বাসিন্দা সেখানে অবস্থান করছে তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। এদিকে সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে ততই বাড়ছে গাজায় ইসরায়েলের স্থল আক্রমণের আশঙ্কা।
এ সম্পর্কে জাতিসংঘের এজেন্সি ফর প্যালেস্টিনিয়ান রিফিউজির মুখপাত্র জুলিয়েট টোমা বলেন, "আমাদের জানামতে, গত কয়েক দিনের সহিংসতায় গাজা থেকে কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে এবং এক সপ্তাহে মোট ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।"
অন্যদিকে গাজা শহরের নিকটে বসবাসকারী রামি সোয়াইলেম নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনিসহ তার ভবনের অন্তত পাঁচটি পরিবার ইসরায়েলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রামি সোয়াইলেম বলেন, "আমাদের শেকড় এই মাটিতেই প্রোথিত। আমরা এখানেই মর্যাদার সাথে মরব।"
ইসরায়েলের ক্রমাগত বোমা হামলায় শঙ্কিত হয়ে আনুমানিক ৩৫ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক গাজা শহরের প্রধান হাসপাতালের মাঠে জড়ো হয়েছে। গাজাবাসীরা হাসপাতালের গাছের নিচে, ভবনের লবি এবং করিডোরেও আশ্রয় নিয়েছে এই আশায় যে, এখানে হয়তো তারা হামলা থেকে রক্ষা পাবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ডাঃ মেধাত আব্বাস বলেন, "গাজায় বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং অনেকে নিজ বসতি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এমতবস্থায় গাজার বাসিন্দাদের কাছে হাসপাতালই একমাত্র নিরাপদ জায়গা। শহরে ধ্বংসযজ্ঞের এক ভীতিকর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।"
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর বড়মাত্রায় আচমকা হামলা চালায় স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই হামলায় প্রায় ১,৩০০ ইসরায়েলি নিহত হন। তার পরেই পাল্টা আক্রমণ চালাতে থাকে ইসরায়েল।
গাজার সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী যুদ্ধাস্ত্র সমবেত করেছে ইসরায়েল। তারা গাজায় স্থল অভিযান শুরু করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, গাজার জন্য চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে আসা জাতিসংঘের বিমান মিশরে অবতরণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ একটি পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবার মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে, গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযানে গেলে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হতে পারে, যা হবে 'একেবারেই অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পুতিন বলেন, "রাশিয়া গঠনমূলকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রস্তুত। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত বন্ধে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে এগোতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হানাহানির অবসান করতে পারবে।"