গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানকে ‘পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে প্রতিরোধের অঙ্গীকার হামাসের
ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলার গতি বৃদ্ধি করছে। এমতাবস্থায় আজ (শনিবার) হামাসের পক্ষ থেকে 'পূর্ণ শক্তি' দিয়ে তেল আবিবের এই হামলা প্রতিরোধের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ইসরায়েল সেনাদের স্থল অভিযান বৃদ্ধির ফলে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনের যোদ্ধাদের সাথে সংঘর্ষের তৈরি হয়েছে।
আজ (শনিবার) সকালের মধ্যে গাজায় ইন্টারনেট ও মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাও একবারে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং টেলিকম কোম্পানিগুলো ইসরায়েলের বিমান হামলাকে দায়ী করেছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে নিউজ ব্রিফিংয়ে বলেন, "ইসরায়েলি স্থলবাহিনী আজ (শুক্রবার) রাত থেকে গাজায় অভিযান বাড়াচ্ছে।"
বেশ কয়েকদিন ধরেই গাজায় স্থল অভিযানের হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরায়েল। এবার হ্যাগারির এমন ঘোষণায় সেই হুমকিই যেন বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে।
হ্যাগারি জানান, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামাসের তৈরিকৃত টানেল এবং অন্যান্য অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে গতকাল (শুক্রবার) রাতে হামাসের পক্ষ জানানো হয় যে, সংগঠনটির যোদ্ধারা গাজার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেইত হানুন এবং আল-বুরেজে ইসরায়েলি সেনাদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
আজ (শনিবার) হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, "আল-কাশেম ব্রিগেড এবং ফিলিস্তিনি সকল প্রতিরোধকামী বাহিনী পূর্ণ শক্তির দিয়ে ইসরায়েলের আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে এবং তাদের অনুপ্রবেশকে ব্যর্থ করতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।"
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, "নেতানিয়াহু এবং তার পরাজিত সেনাবাহিনী কোনো সামরিক বিজয় অর্জন করতে পারবে না।"
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আচমকা হামলা করে বসে হামাস। এতে প্রায় ১৪০০ জন নিহত হয়। একইসাথে প্রায় ২০০ জনেরও বেশি নাগরিককে বন্দী করে স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটি।
পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা করে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার জনের বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছে। একইসাথে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি ও বিদ্যুতের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তেল আবিব।
ইসরায়েলের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরও। বরং গণমাধ্যমের ফুটেজ থেকে দেখা যায়, তেল আবিবের বোমা হামলায় বেসামরিক নাগরিকের ঘরবাড়ি থেকে নির্বিচারে সকল স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে।
চলমান ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে গাজার অবস্থা এমনিতেই শোচনীয় ছিল। এখন স্থল আক্রমণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি যেন আরও অবনতির দিকে পৌঁছেছে।
প্রায় ২৩ লাখ গাজাবাসী পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা আত্মীয়দের সাথে কিংবা একে অপরের সাথে যোগাযোগও করতে পারছে না।
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, "আমরা এখন গাজায় যা দেখতে পাচ্ছি সেটা খুবই অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতি। অনুগ্রহ করে যদি কোনো বন্ধু আমাদের শুনতে পান তবে তাদের জানাতে চাই যে, আমরা এখন সংবাদ ডেস্কের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছি না। যোগাযোগের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।"
গাজার বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী যা করছে সেটাকে সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য অনেকটা 'সম্মিলিত শাস্তি' বলে মনে করছে অনেকে। তারই ফলস্বরূপ এত বিশাল সংখ্যক মানুষ এখন বাকি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
আইডিএফ মুখপাত্র হ্যাগারি বলেন, "ইসরায়েলি বাহিনী এখনো জিম্মি হওয়া সকলকে উদ্ধারে জাতীয় মিশনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সামরিক বাহিনী সবদিক রক্ষা করতে প্রস্তুত।"
এছাড়াও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার বাসিন্দাদের ফের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সেখানেও নির্বিচারে বোমা ফেলছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
এদিকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট এক টুইটে জানিয়েছে, তারা গাজায় তাদের দলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছে না। আল জাজিরার সংবাদদাতা জেমস বেস জানান, ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি এ ঘটনাকে যুদ্ধের সম্ভাব্য নতুন পর্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রেড ক্রিসেন্টের টুইটে বলা হয়: "ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ল্যান্ডলাইন, সেলুলার ও ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার কারণে গাজা উপত্যকায় আমরা অপারেশন রুম ও সেখানে কর্মরত সকল দলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি।"
অন্যদিকে গাজায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তা প্রদানকারী জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি বলেছেন, উপত্যকাটির স্থানীয় বাসিন্দারা এখন নিজেদের 'বিচ্ছিন্ন এবং পরিত্যক্ত' মনে করছে।
হামাসের বিরুদ্ধে ওঠা জাতিসংঘের জ্বালানি চুরির অভিযোগও খারিজ করে দেন ল্যাজারিনি। সে সাথে যোগ করেন যে, মিশরের সীমান্ত অতিক্রমে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে যে সংখ্যাক ত্রাণবাহী ট্রাককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি স্বল্প।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গতকাল (শুক্রবার) গাজায় 'মানবিক যুদ্ধবিরতির' আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। গাজা যুদ্ধে জাতিসংঘের প্রথম প্রতিক্রিয়া এটি।
যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কানাডার একটি সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ১২০-১৪ ভোটে জাতিসংঘে গৃহীত হয়। ৪৫ সদস্য রাষ্ট্র এদিন অনুপস্থিত ছিল। এই প্রস্তাবে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার নিন্দা করা হয়েছে এবং হামাসের হাতে জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করা হয়েছে।