ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশ্বের নানা শহরে হাজার হাজার মানুষের মিছিল
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় প্রতিনিয়ত নির্বিচারে বোমা হামলা করছে ইসরায়েল৷ তেল আবিবের এমন প্রতিক্রিয়ার বিশ্বজুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
এমনকি গাজায় স্থল অভিযানের মাত্রাও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। এমতাবস্থায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াজুড়ে শহরে শহরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি হয়েছে লন্ডনে। সেখানে দেশটির বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের কাছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিশাল মিছিল করেছে।
লন্ডনে ক্যামিল রেভুয়েলটা নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, "পরাশক্তির দেশগুলো এই মুহূর্তে নিজেদের ভূমিকা কার্যকরীভাবে পালন করছে না। এই কারণেই আমরা এখানে এসেছি। আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি৷ ফিলিস্তিনিদের অধিকার, তাদের অস্তিত্বের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, মানবাধিকারসহ সমস্ত অধিকার যাতে পায়, সে আহ্বান জানাচ্ছি৷
ক্যামিল রেভুয়েলটা আরও বলেন, "বিক্ষোভটি হামাস পক্ষে বিপক্ষে নয়। বরং ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জীবন যেন বাঁচে, সেই সম্পর্কে।"
তবে এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান বরং বিপরীতমুখী। দেশটির পক্ষ থেকে বরাবরই 'ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে' বলে বোমা হামলাকে সমর্থন করেছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে৷ হামাস পরিচালিত উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলে হামাসের আচমকা হামলায় অবশ্য প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। তাই প্রথমদিকে তেল আবিব পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ও কিছু নাগরিকের সমর্থন পেয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতেতে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলায় ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে; বিশেষ করে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে।
তারই ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়ায় কুয়ালামাপুরে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের সামনে বেশ বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে তুরস্কের শহর ইস্তানবুলে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে 'গণহত্যা' হিসেবে অভিহিত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, দেশটির পশ্চিমা মিত্ররাই ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের পিছনে 'প্রধান অপরাধী'।
উন্মুক্ত মঞ্চে এরদোয়ান বলেন, "ইসরায়েল, আমরা তোমাকে বিশ্বের দরবারে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ঘোষণা করব। আমরা এর প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমরা ইসরায়েলকে বিশ্বের কাছে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেব।"
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য অনেক দেশে নিষিদ্ধ হলেও হামাসকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে মনে করেন না বলেও আরেকবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে এরদোয়ান এ কথা বলেন।
একইভাবে ইরাকিরা বাগদাদে এবং ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা গতকাল (শনিবার) তেল আবিবের বিপক্ষে বিক্ষোভ করেছে।এছাড়াও বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পণ্যের বৈশ্বিক বয়কটের আহ্বান জানায়। স্লোগানে তারা বলতে থাকেন, "ফিলিস্তিনের শিশুদের হত্যায় সহযোগিতা করবেন না।"
ইউরোপের কোপেনহেগেন, রোম এবং স্টকহোমেও মানুষেরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি শহরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে র্যালি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, এতে করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
তবে প্যারিসে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গতকাল (শনিবার) একটি ছোট র্যালি আয়োজিত হয়েছে। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মার্সেইতেও কয়েকশো মানুষ মিছিল করেছে।
নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে হাজার হাজার মানুষকে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে দেখা যায়। একইসাথে 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মিছিল করে তারা।
এদিকে লন্ডনে ইসরায়েলি দূতাবাসের চারপাশে যাতে নির্বিঘ্নে বিক্ষোভ করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
শহরটিতে গতকাল (শনিবার) হওয়া বিক্ষোভটি অনেকটা শান্তিপূর্ণই ছিল। তবুও পুলিশ ৯ জনকে আটক করেছে।
এদের মধ্যে দুইজনের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। আর বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের অনুমান মতে, এই বিক্ষোভে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার লোকের উপস্থিতি ছিল।
এদিকে ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গত শুক্রবার রাত থেকে গাজায় অভিযান বাড়াচ্ছে। বোমার আঘাতে জ্বলতে থাকা অঞ্চলটিতে সাধারণ যোগাযোগের সব মাধ্যমও বন্ধ রয়েছে।
চলমান ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে গাজার অবস্থা এমনিতেই শোচনীয় ছিল। এখন স্থল আক্রমণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি যেন আরও অবনতির দিকে পৌঁছেছে।