গাজাকে দুইভাগ করে ফেলা হয়েছে, দাবি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজায় স্থল আক্রমণের জন্য বহুদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল৷ এবার দেশটির সামরিক বাহিনী আইডিএফের দাবি, গাজা শহরকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। একইসাথে তারা অবরুদ্ধ উপকূলীয় উপত্যকাটিকে দুইভাগ করে ফেলেছে।
এই বিষয়ে আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি গতকাল (রবিবার) বলেন, "বর্তমানে গাজা উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে ভাগ হয়ে গেছে।" একইসাথে এটিকে চলমান যুদ্ধের 'গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়' হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
অন্যদিকে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়, আইডিএফ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় প্রবেশ করতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় রাতের দিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছে।
এদিকে তৃতীয়বারের মতো গাজায় সব ধরনের যোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
গতকাল (রোববার) ফিলিস্তিনি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি প্যালটেল বলেছে, "এর আগে পুনরায় সংযোগ দেওয়া মূল রুটটি আবারও ইসরায়েলের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।"
এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিয়ে তিনবারের মতো গাজায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো। আগেরবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী করেছে কি না — এ নিয়ে তারা কিছু বলতে রাজি হয়নি।
কিন্তু তখন আইডিএফ বলেছিল, নিজেদের বাহিনীকে রক্ষা করতে তারা 'যা করা দরকার তা করবে'। এমতাবস্থায় এবারের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি সামরিক আক্রমণের নতুন পর্যায় সম্পর্কে জানার কাজটি আরও জটিল করে তুলেছে।
এদিকে জাতিসংঘের প্যালেস্টিনিয়ান রিফিউজি এজেন্সির মুখপাত্র জুলিয়েট তোমা বলেন, "আমরা ইউএনআরডব্লিওএ টিমের অধিকাংশ সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।"
প্রথমবার গাজায় যোগাযোগ বিভ্রাট হয়েছিল ৩৬ ঘণ্টার জন্য। পরবর্তীতে দ্বিতীয়টি কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। এমতাবস্থায় স্থল আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে তৃতীয়বারের মতো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কতদিন স্থায়ী হবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে গতকাল (রবিবার) ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার দুটি কেন্দ্রীয় শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে বলে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাবে। যদিও দেশটির মিত্র যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে গাজায় মানবিক বিরতির আহ্বান করা হয়েছে। যাতে করে চরম মানবিক বিপর্যয় শুরু হওয়া অঞ্চলটিতে ত্রান-সাহায্য পাঠানো যায়।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের ক্রমাগত বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯,৭০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত ৪ হাজার জন শিশু। ইসরায়েলি সৈন্যরা জনবহুল শহুরের আশেপাশে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
এদিকে মাগহাজি শরণার্থী শিবিরে আচমকা বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ এই শিবিরটিতেই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় নিতে বলেছিল। এমতাবস্থায় ঘটনাটি সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে আরেকটি পৃথক বিমান হামলা সেন্ট্রাল গাজার বুরেজি শরণার্থী শিবিরের একটি স্কুলের কাছে বাড়িতে আঘাত হানে। আল-আকসা হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে। এমনকি গত বৃহস্পতিবারও এই শিবিরটিতে হামলা হয়েছিল।
চলমান যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের নানা দেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ এবং বিদেশী বিক্ষোভ সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজাজুড়ে তাদের বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় সমালোচকরা মনে করেন যে, বিপুল সংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করলে ইসরায়েলের এইসব হামলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত শনিবার আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তারই একদিন পর গতকাল (রবিবার) ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে দখলকৃত পশ্চিম তীরে বৈঠক করেছেন।