গাজা টানেল বন্যা প্রতিরোধী করেই তৈরি করা: হামাস
বন্যা প্রতিরোধী করেই গাজার টানেলগুলো তৈরি করা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বৈরুতে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান এমনটাই দাবি করেছেন।
এর আগে গাজায় টানেল ধ্বংসের জন্য ইসরায়েল নতুন এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে নানা রিপোর্টে উঠে এসেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তেল আবিব বেশ বড়সড় একাধিক পাম্পের সাহায্যে সাগরের পানি দিয়ে টানেলগুলো ভাসিয়ে দিতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই কৌশলের মাধ্যমে একদিকে টানেল ধ্বংস হবে। অন্যদিকে টানেলে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধারা বাইরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে। তবে এটি গাজায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় এক মাইল উত্তরে কমপক্ষে পাঁচটি পাম্প জড়ো করেছে। প্রতিটি পাম্পই ভূমধ্যসাগর থেকে পানি উত্তোলন এবং ঘণ্টায় কয়েক হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত করতে সক্ষম। যা কি-না মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো টানেলকে ভাসিয়ে দিতে পারে।
ইসরায়েলি বাহিনী এ পর্যন্ত ৮০০টি টানেল চিহ্নিত করেছে। যদিও তারা বলছে যে, হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক এর চেয়েও অনেক বড়।
আইডিএফ কর্মকর্তারা জানান, গত মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে এ পরিকল্পনার কথা জানায় ইসরায়েল। পরে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা ও সামরিক কার্যকারিতার বিপরীতে এর পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়।
তেল আবিবের এমন পরিকল্পনার জবাবে হামদান বলেন, "টানেলগুলি দক্ষ ও শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো প্রতিরোধের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেগুলো বন্যায় ভাসিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সকল ধরনের আক্রমণের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে।"
অন্যদিকে 'সীমিতভাবে' হামাসের কিছু টানেলকে সমুদ্রের জল দিয়ে প্লাবিত করার জন্য 'সাবধানে পরীক্ষা' শুরু করার কথা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র জানানো হয়েছে। এতে করে টানেলগুলিতে বৃহত্তর স্কেলে পরিকল্পনামাফিক অপারেশনটি করা যাবে কি-না, সেটি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে।
এছাড়া হামদান গাজায় থাকা ইসরাইয়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে সম্ভাব্য নতুন আলোচনার অগ্রগতির আশা কম বলে মন্তব্য করেছেন। এখনো উপত্যকাটিতে হামাসের কাছে প্রায় ১৩০ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে।
এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধ তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছিল। এরপরেই তেল আবিবের পক্ষ থেকে শুরু হয় নির্বিচারে বোমা হামলা।
এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৮ হাজার ৬০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
একইসাথে গাজা উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় ৮০ ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তেল আবিব গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এতটা নির্মমভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে যে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এটিকে 'পৃথিবীর মধ্যে জাহান্নাম' বলে অভিহিত করেছেন। একইসাথে উপত্যকাটিতে খাদ্য, জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুতের প্রবেশাধিকারও কঠোরভাবে সীমিত করেছে দেশটি।