চীনের শাওমি আনছে বৈদ্যুতিক গাড়ি, লক্ষ্য শীর্ষ অটোমেকার হওয়া
চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি এসইউ৭-এর উন্মোচন করেছে। স্মার্টফোনের বাজার দখল করে রাখা এ প্রযুক্তি কোম্পানি এবার চায়– বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অটোমেকারের মধ্যে একটি হতে।
এসইউ৭ নামের এই গাড়িটি সেডান ধরনের গাড়ি। এসইউ দ্বারা বোঝানো হয়েছে- স্পিড আলট্রা। শাওমির প্রধান নির্বাহী লেই জুন দাবি করেন, তাদের এই 'সুপার ইলেকট্রিক মোটর' প্রযুক্তির গাড়ি টেসলা ও পোর্শের বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকেও বেশি গতিতে চলতে সক্ষম।
গাড়িটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চীনের বাজারে প্রবেশ করবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম চীনের মোটরগাড়ির বাজার– অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় ভোক্তা চাহিদা হ্রাসের ধাক্কা মোকাবিলা করছে। যেকারণে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য গাড়ি প্রস্তুতকারকদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা কম মূল্যেই গাড়ি বিক্রি হচ্ছে এখন।
কিন্তু, এই পরিস্থিতির পরও শাওমির প্রধান নির্বাহী তাদের নতুন গাড়ির সাফল্য নিয়ে অনেকখানি আশাবাদী। তিনি বলেন, "আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম করে, আমরা বিশ্বের শীর্ষ ৫ অটোমেকারদের মধ্যে একটি হয়ে উঠব, আমরা চীনের সামগ্রিক অটোমোবাইল শিল্পকে উন্নীত করার জন্য যথেষ্ঠ প্রয়াসী।"
তিনি আরও বলেন, "টেসলা ও পোর্শের থেকেও একটি ভালো মানের গাড়ি তৈরি করার স্বপ্ন আছে আমাদের।"
স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাথে শেয়ার করা অপারেটিং সিস্টেমের কারণে শাওমির এসইউ৭ গ্রাহকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শাওমি ব্যবহারকারীরা এই শেয়ার করা অপারেটিং সিস্টেমের কারণে তাদের মোবাইল অ্যাপগুলো এসইউ৭-এ ব্যবহার করতে পারবেন।
সাংহাই-ভিত্তিক অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞ বিল রুশো বলেন, "শাওমি হল একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড, যার কয়েক মিলিয়ন 'এমআই ফ্যান' বা এর স্মার্ট ডিভাইস ইকোসিস্টেমের সদস্য রয়েছে। অটোমোবাইলও একধরনের স্মার্ট ডিভাইস হয়ে গেলে– তাদের এখানে সফল হওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।"
এসইউ৭ দুইটি সংস্করণে বাজারে পাওয়া যাবে, একটি সংস্করণ একবার সিঙ্গেল চার্জে ৬৬৮ কিলোমিটার এবং অপর সংস্করণটি ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারবে। অন্যদিকে, টেসলার মডেল এস- এর রেঞ্জ ৬৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
শাওমি'র পক্ষ থেকে এখনও গাড়িটির দাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে সিইও লেই জুন বলেন, "গাড়ির বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা অনুযায়ী, এর দাম কিছুটা বেশি হবে, তবে তা যৌক্তিক হবে বলে আমি মনে করি।"
প্রায় চার দশক পর চলতি শীতে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা দেখা গেছে চীনে। তাই ভোক্তারা গাড়িটি শীতকালে কেমন সার্ভিস দেবে তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু লেই জুন জানান, তাদের গাড়িটি নিম্ন তাপমাত্রায়ও দ্রুত চার্জ হওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া তুষারপাতে রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে– তা শনাক্ত করার উন্নত প্রযুক্তি আছে এ গাড়িতে।
তবে লেই জুনের এরকম উচ্চাভিলাষী ঘোষণা সত্ত্বেও, পুঁজিবাজারে শাওমির শেয়ারের দাম বাড়েনি। হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে শাওমির শেয়ারদর এর আগে যেটুকু বেড়েছিল, তার তুলনায়ও ০.৩ শতাংশ কমে গেছে। এ অবস্থায় চীনের এ পঞ্চম বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা, স্মার্টফোনের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক যানবাহনে (ইভি) বৈচিত্র্য আনছে। কোম্পানিটির আগামী এক দশকে অটোমোবাইল খাতে দশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার লক্ষ্য রয়েছে। হুয়াওয়ে এবং বেইডুর মতো অন্যান্য চীনা প্রযুক্তি সংস্থাগুলোও ইভিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে।
শাওমির গাড়িগুলো, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অটোমেকার বিএআইসি গ্রুপের একটি ইউনিট দ্বারা বেইজিংয়ের একটি কারখানায় উৎপাদিত হবে। কারখানাটি বার্ষিক দুই লাখ যানবাহন উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে।
জেংশাং সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত তৃতীয় ত্রৈমাসিকের তথ্য অনুযায়ী, চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে– শাওমির প্রধান প্রতিযোগী বিওয়াইডি। এ বাজারের এক-তৃতীয়াংশ তাঁদের দখলে। অন্যদিকে, টেসলার দখলে আছে বাজারের প্রায় ৯ শতাংশ।