চ্যাটজিপিটির সহায়তায় উপন্যাস লিখেও সাহিত্য পুরস্কার জিতলেন জাপানের লেখক
জাপানের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ 'আকুতাগাওয়া' সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন দেশটির জনপ্রিয় লেখক রি কুদান। তবে পুরষ্কারটি লাভের পর এই সাহিত্যিক জানান, বইটি লিখতে তিনি বহুল আলোচিত এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির সহায়তা নিয়েছেন।
গত বুধবার ৩৩ বছর বয়সী কুদানকে 'দ্য টোকিও টাওয়ার অফ সিম্পেথি' উপন্যাসের জন্য পুরষ্কারটি দেওয়া হয়। এরপর একটি প্রেস কনফারেন্সে লেখক নিশ্চিত করেছেন যে, তার এই বইটির প্রায় ৫ ভাগ এআইয়ের সহায়তায় লেখা হয়েছে।
কুদান বলেন, "সৃজনশীলতাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার সাপেক্ষে আমি আমার উপন্যাস লেখায় এআইয়ের ব্যবহার অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছি।"
উপন্যাসটি মূলত টোকিওতে একটি আরামদায়ক হাই-রাইজ কারাগার নির্মাণের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে। যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন স্থপতির দ্বিধাকে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়।
কুদান জানান, ব্যক্তিগত জীবনেও যেসব সমস্যাগুলির কথা তিনি কাউকে বলতে পারবেন না সেটা তিনি চ্যাটজিপিটির সাথে পরামর্শ করেন। তিনি বলেন, "এআই আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী আউটপুট না দিলে আমি মাঝে মাঝে প্রধান চরিত্রের লাইনে নিজের অনুভূতি প্রতিফলিত করেছি।"
তবে কুদানই প্রথম লেখক নন যিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। এমতাবস্থায় অনেক সৃজনশীল শিল্পীই মনে করেন যে, তাদের জীবিকা এআই প্রযুক্তির দ্বারা হুমকির মুখে পড়বে।
গত বছর বার্লিন-ভিত্তিক ফটোগ্রাফার বরিস এলডাগসেন এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রিয়েটিভ ফটো বিভাগে জয়ী হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে তার কাছ থেকে সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এদিকে জর্জ আর.আর. মার্টিন, জোডি পিকোল্ট ও জন গ্রিশামের মতো লেখকরা গত বছর চ্যাটজিপিটির মূল কোম্পানি ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলায় যুক্ত হয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মটি মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সিস্টেমগুলিকে প্রশিক্ষণ দিতে বিনা অনুমতিতে কপিরাইটযুক্ত কন্টেন্ট ব্যবহার করেছে৷
অন্যদিকে জেমস প্যাটারসন, রক্সেন গে ও মার্গারেট অ্যাটউডসহ ১০ হাজার জনেরও বেশি লেখক একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। যাতে তারা এআই শিল্পের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের বৃহৎ ল্যাংগুয়েজ মডেল প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের কাজ ব্যবহার করার সময় লেখকদের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইসাথে এক্ষেত্রে লেখকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও আহ্বান জানান।
লেখক ও পুরস্কার কমিটির সদস্য কেইচিরো হিরানো মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স এ বলেন, নির্বাচন কমিটি কুদানের এআইয়ের ব্যবহারকে সমস্যা হিসেবে মনে করে না।
তিনি বলেন, "রি কুদানের পুরস্কার বিজয়ী কাজটি জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে লেখা হয়েছে বলে যে তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে... আপনি যদি বইটি পড়েন, তবে আপনি দেখতে পাবেন যে, জেনারেটিভ এআই কাজটিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যবহারে হয়তো সমস্যা হবে। কিন্তু 'টোকিও সিমপ্যাথি টাওয়ার'-এর ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য নয়।"
এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ সৃজনশীল কাজে কুদানের মতোই এআই-এর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে বাকিরা প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই লেখা অন্যান্য লেখকদের কাছে এটিকে 'অসম্মানজনক' বলে মন্তব্য করেছেন।