বিশ্বের কয়টি দেশে এখনো মৃত্যুদণ্ড আছে এবং কতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মত নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটির সরকারি তথ্যমতে, কেনেথ স্মিথ নামক এই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আলাবামায় কার্যকর করা হয়। তিনি দেশটির ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে।
সম্প্রতি একজন জাপানি ব্যক্তিকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে একটি অগ্নিসংযোগ হামলার জন্য, যাতে ৩৬ জন নিহত হয়েছিল।
বিশ্বের অনেক দেশ মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বাতিল করলেও বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়ছে।
বিশ্বের কয়টি দেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়?
২০২২ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের ৫৫টি দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। এর মধ্যে নয়টি দেশেই শুধু সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ যেমন একাধিক হত্যাকাণ্ড বা যুদ্ধাপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর বাহিরে আরো ২৩টি দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলে গত ১০ বছরে একটিও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
প্রতি বছর কতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়?
সরকারি তথ্য, মিডিয়া রিপোর্ট এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবার অথবা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাঠানো তথ্য অনুসারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিক থেকে চীন বিশ্বের শীর্ষ দেশ। প্রতি বছর দেশটিতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু যেহেতু চীন মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করে না তাই নির্ভরযোগ্য সংখ্যা প্রদান করা অসম্ভব।
চীন ছাড়াও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঐ বছর বিশ্বব্যাপী ৮৮৩টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। যা ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এটি ১৯৮৮, ১৯৮৯ এবং ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক কম কারণ এই বছরগুলোতে ১৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরো বলেছে, ২০২২ সালে ৫২টি দেশে কমপক্ষে ২০১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
অনেক বন্দী তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে বছরের পর বছর অথবা কয়েক দশক পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত থাকে।
কোন দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়?
২০২২ সালে ২০টি দেশ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে যেখানে ২০২১ সালে ১৮টি দেশ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।
চীন ছাড়াও ইরান, সৌদি আরব, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ইরানে কমপক্ষে তিনটি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটেছে। ১৮ বছরের কম বয়সে সংঘটিত অপরাধের জন্য ইরান অন্তত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কীভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে?
২০২২ সালে সৌদি আরবই একমাত্র দেশ যেখানে শিরচ্ছেদকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ফাঁসি, প্রাণঘাতী ইনজেকশন এবং গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা রাজ্য নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে কেনেথ স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মৃত্যুদণ্ড তথ্য কেন্দ্রের মতে, তিনিই দেশটির প্রথম ব্যক্তি যাকে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
স্মিথের আইনজীবীরা এই অপরীক্ষিত পদ্ধতিকে 'নিষ্ঠুর' এবং 'অস্বাভাবিক' শাস্তি বলেছিল।
আলাবামা এবং অন্যান্য দুটি মার্কিন রাজ্য নাইট্রোজেন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে কারণ যে ওষুধগুলি সাধারণত 'প্রাণঘাতী ইনজেকশনে' ব্যবহৃত হয় সেগুলি খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন দেশে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা পরিবর্তিত হয়েছে?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১১টি দেশকে তুলে ধরা হয়েছে যেখানে প্রতিবছর বিভিন্ন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হল চীন, মিশর, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম এবং ইয়েমেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বাস করে, উত্তর কোরিয়া 'নির্দিষ্ট হারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে' কিন্তু এটি যাচাই করার কোন সুযোগ নেই।
২০২২ সালে সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
বাহরাইন, কোমোরোস, লাওস, নাইজার এবং দক্ষিণ কোরিয়া; এই পাঁচটি দেশ কয়েক বছর ধরে মৃত্যুদণ্ড ব্যবহার না করে ২০২২ সালে মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সাল থেকে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে, ১৯৯৯ সালে দেশটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
কোন কোন দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে?
বর্তমানে ১১২টি দেশে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়না যেখানে ১৯৯১ সালে সংখ্যাটি ছিল ৪৮।
২০২২ সালে ছয়টি দেশ মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল করেছে। কাজাখস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, সিয়েরা লিওন এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক; এই চারটি দেশ মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেছে।
ইকুয়াটরিয়াল গিনি এবং জাম্বিয়া বলেছে, শুধু সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ব্যবহার করা হবে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে হত্যা এবং সন্ত্রাস সহ ১১টি গুরুতর অপরাধের জন্য বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড অপসারণের পক্ষে ভোট দেওয়া হয়েছিল।
ঘানার পার্লামেন্টও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার পক্ষে ভোট দেয়।