ওয়ানএমডিবি: মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সাজা কমানো হলো
দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের শাস্তির মেয়াদ অর্ধেক কমানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার রাজার কাছে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে পার্ডন বোর্ড নামে রাজকীয় একটি পরিষদ তাঁর সাজা ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছর করেছে। খবর বিবিসির।
এছাড়া, বোর্ড তাঁর জরিমানা ২১০ মিলিয়ন রিঙ্গিত থেকে কমিয়ে ৫০ মিলিয়ন রিঙ্গিত (৮.৩ মিলিয়ন পাউন্ড, ১০.৫ মিলিয়ন ডলার) করেছে।
ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদের (ওয়ানএমডিবি) অর্থ কেলেঙ্কারির প্রথম মামলায় ২০২২ সালে নাজিবকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠান দেশটির আদালত।
কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন তিনি। কিন্তু সব বিচারপতির সম্মতিতে তাঁর আবেদন খারিজ করে সাজা বহাল রাখার আদেশ দেওয়া হয়।
তবে, ২০২৮ সালের আগস্টে মুক্তি পেতে হলে নাজিবকে অবশ্যই এর আগে জরিমানার পুরো অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁর সাজার মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ, ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব ২০২০ সালে ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
২০২২ সালের ২৪ আগস্ট থেকে তিনি কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ইস্তানা নেগারায় রাজার ১৬তম সমাবেশে নাজিব রাজাকের সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় পার্ডন বোর্ড।
বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং, আল-সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতউদ্দিন আল-মুস্তফা বিল্লাহ শাহ।
মালয়েশিয়ার রাজা আবদুল্লাহ আহমদ শাহ বুধবার সুলতান ইব্রাহিম ইস্কান্দারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক জেমস চিন বিবিসিকে বলেন, সাজা কমানোর মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। তা হলো আপনি যদি আপনার ক্যারিয়ারের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছান, তাহলে কোনো কিছুতেই আপনার আর কিছু হবে না।
দুই সপ্তাহ আগে কুয়ালালামপুরের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য কারারক্ষীরা নাজিবকে কারাগার থেকে নিয়ে যায়।
কারাদণ্ড সত্ত্বেও জাতিগত মালয়দের মধ্যে এখনও নাজিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং তিনি এখনও তাঁর দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।
ওয়ানএমডিবি স্কিম ছিল জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি জাল। যার মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মালয়েশিয়ার জনসাধারণের উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগানোর পরিবর্তে নাজিবসহ সংশ্লিষ্টদের পকেটে যেত।
পলাতক অর্থলগ্নিকারী জো লোকে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ এখনও খুঁজছে। তাকে এই পরিকল্পনার পেছনে মাস্টারমাইন্ড বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা গত বছর জানিয়েছিল, তিনি ম্যাকাওয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি কি?
নাজিব প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মালয়েশিয়ার অর্থনীতির উন্নয়নের গতি জোরদার করতে ২০০৯ সালে ওয়ানএমডিবি তহবিল গঠন করেন।
২০১৫ সালে ব্যাংক ও বন্ডহোল্ডারদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়ানএমবিডির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
ওই তহবিলের প্রায় সাড়ে চারশ কোটি মার্কিন ডলার প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র; যা নিয়ে দেশটি তদন্ত করছে।
তহবিলের অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় সবচেয়ে বড় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজাক নিজে। তার বিরুদ্ধে ৬৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
যদিও রাজাক শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। কিন্তু তাঁর সম্পদ এবং স্ত্রীর বিলাসী জীবন যাপন বিপরীত কথাই বলছে।
মালয়েশিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, লোপাট হওয়া টাকা বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাট, ব্যক্তি মালিকানাধীন উড়োজাহাজ ও সুপার ইয়ট,দামি শিল্পকর্ম এবং এমনকি লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত হলিউড ব্লকবাস্টার 'উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট'-এর পেছনে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে।