ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা
জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার জবাবে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ও এর সমর্থনকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত সপ্তাহে জর্ডানে ওই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়। এ ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে। এরপর গতকাল প্রথমবারের মতো প্রতিশোধমূলক হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখানেই শেষ নয়, সামনে আরও হামলা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও মার্কিন বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে লক্ষবস্তুগুলোতে হামলা চালায়নি, তবে তাদের এই হামলা গাজায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মজুদ এবং লজিস্টিক ও যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ চক্রে হামলা চালিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, সিরিয়ায় চারটি স্থান ও ইরাকে তিনটি স্থান মিলিয়ে ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে।
হামলায় কুদস ফোর্সকে লক্ষ্য করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন বাহিনী। গোষ্ঠীটি আইআরজিসির বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি ও সশস্ত্র একটি শাখা।
জয়েন্ট স্টাফের পরিচালক মার্কিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডগলাস সিমস বলেছেন, মনে হচ্ছে হামলা সফল হয়েছে। বোমাগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্রশস্ত্রে আঘাত হানায় বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে। হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর কোনো সদস্য নিহত হয়েছে কিনা, সেটি স্পষ্ট নয়।
তবে তিনি যোগ করেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা লক্ষ্যবস্তুগুলোতে অবস্থান করতে পারেন এবং হামলায় তাদের হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে জেনেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার বলেছে, মরুভূমি অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে 'মার্কিন আগ্রাসন' চালানো হয়েছে। হামলার কারণে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।
ইরাকের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরাকের সীমান্ত এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। হামলার কারণে এই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
ইরাকের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া রাসুল এক বিবৃতিতে বলেন, এসব বিমান হামলা ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। এটি ইরাক সরকারের প্রচেষ্টাকে খাটো করে এবং ইরাক ও এই অঞ্চলকে শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়ার হুমকি তৈরি করে।
আরও হামলার আশঙ্কা
গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় প্রথমবারের মতো মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনা ঘটে।
মার্কিন কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলায় তাদের তিনজন সেনা নিহত ও ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আর এ হামলার জন্য ইরান দায়ী।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, 'আমাদের জবাব আজ থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের পছন্দমতো সময়ে ও জায়গায় এ হামলা অব্যাহত থাকবে।'
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, আইআরজিসি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বাইডেন অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'এটি আমাদের জবাবের শুরু।'
যদিও সরাসরি হামলার জন্য বাইডেনের ওপর রিপাবলিকানদের চাপ বেড়েছে, তারপরও পেন্টাগন বলছে যে তারা ইরানের সাথে যুদ্ধ চায় না। তারা এও বিশ্বাস করে যে তেহরানও এমনটাই চায়।
অস্টিন বলেন, 'আমরা মধ্যপ্রাচ্য বা অন্য কোথাও সংঘাত চাই না। তবে প্রেসিডেন্ট ও আমি মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা সহ্য করব না।'
সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা রজার উইকার ইরানের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে খুব বেশি সময় নেওয়ায় বাইডেনের সমালোচনা করেছেন।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছিলেন, ইরান যুদ্ধ শুরু করবে না। কিন্তু কেউ তাকে দুর্বল ভেবে ভয় দেখালে তাকে 'কড়া জবাব' দেবে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, জর্ডানে হামলার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি।
গত ৭ অক্টোবর গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরাক, সিরিয়া ও জর্ডানে মার্কিন সেনারা ১৬০ বারেরও বেশি হামলার শিকার হয়েছে। এদিকে ইসরায়েলে হামলার জবাবে গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ও হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির জন্য ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।
কিরবি বলেন, শুক্রবারের হামলার বিষয়ে ইরাকি সরকারকে আগেই জানানো হয়েছিল।
এদিকে ইরাকের কাতাইব হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী গত মঙ্গলবার বলেছে, তারা মার্কিন বাহিনীর ওপর আর হামলা চালাবে না।
তবে ইরান সমর্থিত আরেকটি ইরাকি গোষ্ঠী নুজাবা বলেছে, গাজা যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং মার্কিন বাহিনী ইরাক না ছাড়া পর্যন্ত তারা এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রাখবে।