‘মার্কিন হামলা সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’: বিবৃতি দিয়ে ইরাকের প্রতিবাদ
ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে সিরিজ বিমান হামলা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মূলত জর্ডানে মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
গতকাল (শনিবার) ইরাক জানায়, মার্কিন এ হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ দেশটিতে মোট ১৬ জন নিহত হয়েছে। আর একটি মনিটরিং গ্রুপ জানায়, হামলায় সিরিয়ায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
গাজায় চলমান যুদ্ধের মাঝেই ওয়াশিংটন ইরানের যোগসূত্র রয়েছে এমন অঞ্চলকে নিবৃত্ত করতে আরও হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হামলার ব্যাপারে জো বাইডেন বলেন, "আমাদের প্রতিক্রিয়া আজ শুরু হয়েছে। এটা আমাদের পছন্দের সময়ে এবং জায়গায় চলতে থাকবে।"
তবে এ হামলায় কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে ইরাক, ইরান ও সিরিয়া। এতে করে অঞ্চলটিতে আঞ্চলিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছে দেশগুলো।
ইরাক সরকার এক বিবৃতিতে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক হামলা ইরাক ও এই অঞ্চলের নিরাপত্তাকে অতল গহ্বরের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।"
এদিকে বাগদাদের সাথে বিমান হামলার সমন্বয় করা হয়েছে বলে ওয়াশিংটন দাবি করেছিল। বিবৃতিতে দেশটি এই দাবিকে 'মিথ্যা' বলে অস্বীকার করেছে। একইসাথে এর পেছনে 'আন্তর্জাতিক জনমতকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে' রয়েছে বলে অভিহিত করা হয়েছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানির অফিস থেকে আসা বিবৃতিটিতে বলা হয়, "এই অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের উপস্থিতি 'ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার' হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে। একইসাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংঘাতে ইরাককে জড়িত করার ক্ষেত্রে যুক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
ইরাকি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহইয়া রাসুল বলেন, "হামলাগুলি আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। এটি আমাদের সরকারের প্রচেষ্টাকে খাটো করে উপস্থাপন করে। একইসাথে এমন একটি হুমকি তৈরি করে যা ইরাক ও এই অঞ্চলকে মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।"
গত সপ্তাহে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় সামরিক ঘাঁটিতে থাকা তিনজন মার্কিন সেনা নিহত হন।
সেই হামলার জন্য ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়া ও ইরাকে অবস্থিত ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয় ওয়াশিংটন।
তারই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ও এর সমর্থনকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরাক, সিরিয়া ও জর্ডানে মার্কিন সেনারা ১৬০ বারেরও বেশি হামলার শিকার হয়েছে। আর ইসরায়েলে হামলার জবাবে গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ও হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির জন্য ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।
আর ইরান সমর্থিত আরেকটি ইরাকি গোষ্ঠী নুজাবা বলেছে, "গাজা যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং মার্কিন বাহিনী ইরাক না ছাড়া পর্যন্ত তারা এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রাখবে।"
ইরাকে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। মার্কিন এ হামলায় ১০ লাখেরও বেশি ইরাকি নিহত হয়েছিল। মিথ্যা অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালিয়েছিল—এটা এখন অনেকটাই প্রমাণিত।
কেননা ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকানদের বলা হয়েছিল, বিশ্বশান্তির জন্য ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে সরানো দরকার। সাদ্দামের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র, জঙ্গি দল আল–কায়েদার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সাদ্দাম গণহত্যা চালাতে চান—এমন অভিযোগও ছিল।
সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মানবতা লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আনা বড় অভিযোগগুলোর একটিও সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি। জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস ইরাক যুদ্ধকে আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।