পাকিস্তানের ভোটে এগিয়ে ইমরান-সমর্থিত প্রার্থীরা, তবু সরকার গঠনের ঘোষণা নওয়াজের!
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ—পিটিআই- সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন।
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মোট আসনসংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে ২৬৫টি আসনের ভোটগ্রহণ হয়েছে বৃহস্পতিবার।
সংবাদসংস্থা আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল পর্যন্ত ৯৯টি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের সিংহভাগই ইমরানের পিটিআই-সমর্থিত। অন্যদিকে ৭১টি আসন পেয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)। এছাড়া আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন। আর এমকিউএম ১৭ আসনে এবং অন্যান্য দল ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে।
ইমরান খানের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি বিজয়-ভাষণ পোস্ট করা হয়। এতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'জাতির নজিরবিহীন পাল্টা লড়াই' পিটিআইকে 'ভূমিধস বিজয়' এনে দিয়েছে। পিটিআই সমর্থকদেরকে এই জয় উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও ভোটে জয়লাভের দাবি করেছেন পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফও। তিনি বলেছেন, পিএমএল-এন সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ভোট না পেলেও একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে। দল এখন জোটগত সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকার গঠনের জন্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এককভাবে ১৩৪টি আসন পায়নি পিএমএল-এন। তাই জোটগতভাবে সরকার গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে নওয়াজ বলেন, পাকিস্তানে বর্তমানে যেসব সংকট রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
নওয়াজ শরিফ জানান, জোট সরকার গঠনের জন্য তার ভাই শাহবাজ শরিফ পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি, জমিয়ত উলেমা ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) নেতা ফজলুর রেহমান ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) নেতা খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী বেশ প্রভাবশালী। গুঞ্জন ছিল, এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সমর্থন পাচ্ছেন নওয়াজ শরিফ। তবে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তার দল।
পরিস্থিতি বিবেচনায় পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকা এবারের নির্বাচনে বড় চমক। ২০১৮ সালে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন হয়েছিল পিটিআই। তবে সামরিক বাহিনীর বিরাগভাজন হয়ে চার বছরের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কোণঠাসা হয়ে পড়ে পিটিআই। কারাবন্দি হন দলের প্রধান ইমরান। এমনকি পিটিআইকে নিজস্ব প্রতীকে (ব্যাট) নির্বাচনও করতে দেওয়া হয়নি। সেজন্য এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামতে হয় পিটিআই নেতাদের।
গত বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের দিন পাকিস্তানজুড়ে বন্ধ রাখা হয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা। এর মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয় নির্বাচনের ফল প্রকাশ নিয়েও। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর ফল ঘোষণা শুরু হয়, তা-ও অত্যন্ত ধীরগতিতে। ভোটে কারচুপির চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ আনে পিটিআইসহ বড় কয়েকটি দল।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়, একটি আসনে প্রার্থীকে গুলি করে হত্যা করায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের। সরকার গঠনের জন্য ১৩৪টি আসন প্রয়োজন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেভাবে সরকারের অংশ হতে পারেন
পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও তারা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৪টি আসন পাচ্ছেন না।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে জয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী যেকোনো দলকে সমর্থন জানাতে পারেন। দেশটির রাজনীতিতে এ চর্চা বেশ পরিচিত। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন আদায়ে দলগুলোর মধ্যে চলে প্রতিযোগিতাও।
অনেক বিশ্লেষকের অভিমত, পিটিআই-সমর্থিত এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি কোনোভাবে সরকারে থাকেন, তাহলে ইমরানের কারাদণ্ডের সাজা বা তার সরকারি দায়িত্বে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, সেটিকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন তারা।
এদিকে গ্যালাপ পাকিস্তান নামক পোলিং গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তা বিলাল ঘানি বলেন, পিটিআই যদি সরকার গঠন করতে না-ও পারে, তবু এ ফলাফল বলছে যে 'রাজনৈতিক কারসাজিরও একটা সীমা আছে'।
'এ ফলই প্রমাণ যে, সেনাবাহিনী সবসময় যা চায় তা পায় না—এটা একটা ভালো দিক,' এএফপিকে বলেন তিনি।