নির্বাচনে ইমরান খানের চমকের পর পাকিস্তানে কে সরকার গঠন করতে পারে?
ভোটগ্রহণের পর পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ তবে দেশটির তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতীয় নির্বাচন সমাপ্তির পাঁচদিন পরও জনগণ জানে না যে, কে বা কারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে কিংবা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
এদিকে পুরো নির্বাচনের সময়টাতে ইমরান খান ছিল জেলবন্দি। আর দল হিসেবে তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ছিল কোণঠাসা। অনেকটা বাধ্য হয়েই দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবুও তারা ৯৩ টি আসনে জয়ী হয়েছে, যা একক দল হিসেবে সর্বোচ্চ। তবে এককভাবে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ১৬৯ টি সিট।
অন্যদিকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ ৭৫ টি আসনে জয়লাভ করেছে; যা দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ধারণা করা হচ্ছে যে, দেশটির সেনাবাহিনী নওয়াজকে পেছন থেকে সমর্থন দিচ্ছে। যদিও দেশে ফেরার আগে পাঁচ বছর ধরে তিনি নির্বাসনে ছিলেন।
আর বিলওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪ টি আসনে জয়লাভ করেছে। যা একক দল হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
দেশটির সংবিধান অনুযায়ী ভোটগ্রহণের দিন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে। ফলে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন সরকার পেতে যাচ্ছে দেশটি।
দেশটির সংসদে মোট আসন রয়েছে ৩৩৬ টি। যার মধ্যে ২৬৬ টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। আর বাকি ৭০ টি আসনের মধ্যে ৬০ টি আসন নারীদের জন্য ও ১০ টি আসন অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত। সেক্ষেত্রে এই সংরক্ষিত আসনগুলো সংসদে দলগুলোর শক্তিমত্তার ওপর ভিত্তি করে দলগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে ইসলামাবাদ থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাফিউল্লাহ কাকার বলেন, "এটি বেশ বিভক্ত অবস্থা যেখানে কোনো দলেরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তবুও তাদের একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করে একটি জোট গঠন করতে হবে।"
এদিকে পিটিআই ও পিএলএম উভয়ই নির্বাচনে জয়লাভের দাবি করেছেন। এমন দ্বন্দ্বের মাঝেই অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। অন্যদিকে পিটিআইয়ের সমর্থকেরা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে।
পিএমএল ও পিপিপি'র জোট
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা ইয়াসমিন মনে করেন, নওয়াজের পিএমএল ও ভুট্টোর পিপিপি আরও কিছু ছোট দলকে সাথে নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারে। ২০২২ সালে ইমরানের প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর পরেও দল দুটি গত আগস্ট পর্যন্ত সরকারে ছিল।
সামিনা ইয়াসমিন বলেন, "প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট কে হবেন এবং প্রদেশগুলোতে কী হবে সেটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"
এখানে পিএমএলের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সোশ্যাল লিবারেল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের সাথে জোট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই দলটি নির্বাচনে ১৭ টি আসনে জয়লাভ করেছেন।
অন্যদিকে পিপিপি হয়ত নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে আরও কিছু সময় নেবে। দলটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আগামী সোমবার ইসলামাবাদে মিটিং করবে।
পিপিপি ও পিটিআইয়ের জোট
পিপিপি'র সিনিয়র নেতা শেরি রেহমানের কাছে বিবিসি উর্দুর পক্ষ থেকে পিটিআইয়ের সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, সকল দলের জন্যই পিপিপি'র দরজা খোলা রয়েছে।
তবে ইমরান খানের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জুলফি বুখারি জানান, জোট সরকার গঠনের কথা ভাবছে না পিটিআই। বরং সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকার পরিকল্পনা করছে দলটি।
পিএমএল ও পিটিআইয়ের জোট
বর্তমানে নওয়াজের পিএমএল-এর সাথে ইমরান খানের পিটিআইয়ের চরম বৈরী সম্পর্ক চলছে। সেক্ষেত্রে এই দুই দল একসাথে জোট সরকার গঠন করবে, এমনটা মনে করা যেন অসম্ভব। তবে রাজনৈতিকভাবে উথাল-পাতাল সময়ে অসম্ভবও কখনো কখনো সম্ভবে পরিণত নয়। কেননা রাজনীতিদের শেষ কথা বলে কিছু নেই।
এক্ষেত্রে পিএমএল-এর সিনিয়র নেতা আজম নাজির একটি 'অংশগ্রহণমূলক জোট সরকারের' আহ্বান জানিয়েছেন। যেখানে তিনি 'সকলের হাতে হাত মেলানো উচিত' বলে মন্তব্য করেছেন। এই আহ্বান বাস্তবায়ন করতে পিটিআইকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উদয় চন্দ্র বিবিসিকে বলেন, "এমনকি যারা আগে ইমরানকে ভোট দেয়নি তারাও বিগত দুই বছরে সেনাবাহিনী তার সাথে এবং তার দলের সাথে যেমন আচরণ করেছে সেটিকে অবিচার বলে মনে করেছে।"
এক্ষেত্রে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ছোট দলগুলোকে এক ছাতায় নিয়ে এসে জোট সরকার গঠন করতে পারে। তখন সংরক্ষিত নারী ও অমুসলিম সদস্যদের আসনের সমীকরণেও বেশ পরিবর্তন আসবে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান