গাজায় ‘সাময়িক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন যুক্তরাষ্ট্রের
গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এবং রাফায় ইসরায়েলি স্থল অভিযানের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খসড়ায় সব জিম্মিকে মুক্তি এবং গাজায় অবাধ মানবিক ত্রাণ প্রবেশের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার আল জাজিরার হাতে আসা খসড়া অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদকে যত দ্রুত সম্ভব গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সব বাঁধা তুলে নেওয়ার কথাও আছে খসড়ায়।
খসড়া প্রস্তাবে রাফায় স্থল আক্রমণ না চালাতে ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, 'নিরাপত্তা পরিষদের জোর দিয়ে বলা উচিত যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানো উচিত নয়।'
অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে তারা রাফায় আরও বড় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে। গাজার ২.৩ মিলিয়ন ফিলিস্তিনির মধ্যে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে দক্ষিণের শহর রাফায়। তাই এ ধরনের পদক্ষেপ বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ঘটাবে এবং দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে থাকা গাজায় মানবিক সংকটকে তীব্রতর করে তুলবে।
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান আরব সদস্য আলজেরিয়া দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাব পেশ করে, যাতে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছিল।
আলজেরিয়ার খসড়া প্রস্তাবটি মঙ্গলবার ভোটের জন্য উত্থাপন করার কথা ছিল। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এটিতে ভেটো দেওয়া হবে, কারণ প্রস্তাবটি ৭ অক্টোবর ইসরায়েল থেকে গাজায় হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বন্দীদের নিয়ে সংবেদনশীল আলোচনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, ইসরায়েল ও কাতার ইসরায়েল-হামাসের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময় নিয়ে আলোচনা করছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে আল জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেইস বলেন, ওয়াশিংটনের খসড়া প্রস্তাবে ভাষার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি শব্দটি প্রস্তাব করেছে । এটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ইসরায়েল কোনও প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি শব্দটি চায়নি এবং এখন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এটি প্রস্তাব করেছে।'
গত ৭ অক্টোবর থেকে ওয়াশিংটন তার মিত্র ইসরাইলকে জাতিসংঘের পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে দুইবার ভেটোও দিয়েছে তারা। তবে গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রস্তাব গ্রহণ এবং সংঘাতের জরুরি মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়ে দু'বার ভোটদানে বিরত থেকেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়েই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
বেইস বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় এখন যুদ্ধবিরতির কথা উত্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়নি। সুতরাং এটি রাশিয়ানদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।'
তিনি উল্লেখ করেন যে, সম্ভাব্য রাফাহ অভিযানের বিষয়ে ইসরাইলের প্রতি ওয়াশিংটনের অবস্থান কঠোর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এ ধরনের অভিযান বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ও বাস্তুচ্যুতি বাড়িয়ে দেবে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বেইস বলেন, 'গত ২৪ ঘণ্টায় ওয়াশিংটনে স্পষ্টতই কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির সময় এখনো অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৯,০৯২ জন নিহত এবং ৬৯,০২৮ জন আহত হয়েছে। আর ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস নেতৃত্বাধীন হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ১৩৯ জন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন