আলোচনায় অগ্রগতির খবরে যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার কথা ভাবছে ইসরায়েল
প্যারিসে গত শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। খবর বিবিসির।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরপরই যুদ্ধকালীন একটি ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ওই মন্ত্রিসভায় তিনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা, এমনকি বিরোধী দল থেকেও অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের ফেরত আনার প্রচেষ্টার একটি অংশ। এ চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদেরও মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড বার্নিয়া শনিবার প্যারিসে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে অধিকতর আলোচনার ভিত্তি তৈরির জন্য একটি চুক্তির রূপরেখায় সম্মত হন। ওই দিন রাতেই বিষয়টি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সামনে উত্থাপন করা হয়। এ সময় মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নেতানিয়াহু এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় লিখেন, 'জিম্মিদের মুক্তির জন্য আমরা আরেকটি রূপরেখা পেতে কাজ করছি। এ কারণে প্যারিসে একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছি। আজ রাতে আমরা আলোচনার পরবর্তী বিষয় বা পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করব।'
পরে জানা গেছে, এ বিষয়ে অধিকতর আলোচনার জন্য এ সপ্তাহেই কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে ইসরায়েল।
প্যারিসের আলোচনার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গতকাল রবিবার বলেছেন, জিম্মি চুক্তি ও অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির 'মৌলিক রূপরেখা' সম্পর্কে একটি বোঝাপড়া হয়েছে।
শনিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্যারিসে জিম্মি ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে।
আরও বলা হয়, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা কাতারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে সম্মত হয়েছে, যেখানে তারা একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে। চুক্তির আলোকে ইসরায়েলে বন্দি শতাধিক ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি ও গাজায় জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাসি হানেগবি শনিবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'এ ধরনের চুক্তির অর্থ এই নয় যে যুদ্ধ শেষ হচ্ছে।'
আলোচনার বিষয়ে অবহিত এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, প্যারিসে কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। সেই সঙ্গে তিনি হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে আলোচকরা ভুল তথ্য ফাঁস করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন।
হামাস অবশ্য এ আলোচনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে রবিবার মিসরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, 'মিসর, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা' আবারও শুরু হয়েছে। এতে হামাসের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছে।
গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি ঠিক মতো খাবারটুকুও পাচ্ছে না সেখানকার বাসিন্দারা।
আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গাজার ২.২ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। শুক্রবার গাজার আল-শিফা হাসপাতালে দুই মাস বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু অনাহারে মারা গেছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় একটি গণমাধ্যম।
এসবের মধ্যেও উপত্যকাটিতে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
নতুন করে হামলার বিষয়ে নেতানিয়াহু এক এক্স বার্তায় লিখেছেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফায় অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য তার মন্ত্রিসভাকে আহ্বান করবেন।
এমনিতেই হামলার কারণে বিপর্যস্ত গাজায় সহায়তা কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি পশ্চিমা দেশের সরকারও সতর্ক করে বলেছে যে রাফায় হামলা চালালে পরিণতি শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৯ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক