১৯৮২ সালে আজিমভের ভবিষ্যদ্বাণী: কম্পিউটার হবে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু; রোবটের কাছে কাজ হারাবে মানুষ
সময়ের সাথে সাথে সভ্যতায় এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। মহাকাশ জয় করেছে মানুষ। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে পৃথিবীতে চলছে নীরব স্নায়ু যুদ্ধ। ব্যক্তিগত কম্পিউটার পৌঁছেছে প্রতি ঘরে ঘরে। এসব কিছু একটা সময় সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরেই ছিল। তবে কেউ কেউ ছিলেন যারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক স্পষ্টভাবে ধারণা করতে পেরেছিলেন। আইজ্যাক আজিমভ ছিলেন তাদেরই একজন।
১৯৮২ সালের এক বিকালে 'দ্য ম্যকনিল- লেহরার নিউজ আওয়ার' অনুষ্ঠানে দর্শকদের এইচ জে ওয়েলস এর 'দ্য শেইপ অব দ্য থিংস টু কাম' এর এক ঝলক দেখানোর আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয় 'ওয়াজন্ট দ্য ফিউচার ওয়ান্ডারফুল' এর লেখক টিম ওনোস্কো, 'ওমনি ম্যাগাজিনের' এডিটর ডিক তেরেছি এবং আইজ্যাক আজিমভকে।
তখন ইতিমধ্যেই আইজ্যাক আজিমভ ভবিষ্যৎ নিয়ে ২৫০টিরও বেশি গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রযুক্তি, সমাজ এবং তাদের মধ্যকার অগ্রসর সম্পর্ক নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বহু মিডিয়াতে।
রবার্ট ম্যাকনিল সায়েন্স-ফিকশন লেখকের সাক্ষাৎকার শুরু করেন মানব সভ্যতার মহাকাশ অভিযান নিয়ে। মহাকাশের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কোন সম্ভাবনা দেখছেন কি-না তা, জানতে চাইলে আসিমভ উত্তর দেন যে, তিনি মহাকাশে অবশ্যই সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।
আশির দশকের শুরুর দিকে মানুষ তখনও ক্রিস্টোফার কলাম্বাসেই পড়ে আছে। আসিমভ তখন 'সোলার পাওয়ার স্টেশন', মহাকাশে ল্যাবরেটরি ও ফ্যাক্টরি স্থাপন, হাজার হাজার মানুষের একরকম স্থায়ীভাবেই মহাকাশে বসতি স্থাপন নিয়ে লিখেছেন। সময়ের সাথে সাথে সভ্যতা বিস্তৃতি এবং শুধু পৃথিবীর উপরই নির্ভরশীল না থাকার ব্যাপারেও লিখেছেন তিনি।
'কম্পিউটার যুগ' নিয়ে জিম লেহরার আজিমভকে প্রশ্ন করলে আজিমভ বলেন, "একসময় কম্পিউটার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। ব্যবহৃত হবে অসাধারণ সব প্রয়োজনে। বিনোদন থেকে শুরু করে মানুষের জীবন আরো সহজতর করতে সবাই ব্যবহার করবে কম্পিউটার।"
তখনকার সময়েও এমন অনেক মানুষ ছিল যারা ভবিষ্যতের এই রূপ নিয়ে অনেক বেশি উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু রোবটের বিষয়টি কীভাবে জানতেন আজিমভ? কীভাবে তিনি জানতেন রোবট একসময় জায়গা করে নিবে মানুষের?
"রোবট মানুষকে মেরে ফেলবে না কিন্তু তাদের কাজ ছিনিয়ে নিবে। যারা একবার তাদের কাজ হারাবে তারা নতুন কোনো কাজ নিতে পারবে না"; এভাবেই রোবটের স্থান দখলের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন আজিমভ।
তার মতে, "আমাদের এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মেনে নিতে হবে- রোবট এর পূর্বের প্রযুক্তি এবং রোবট পরবর্তী প্রযুক্তির মধ্যকার স্থানান্তরের সময়টি যাতে কঠিন এবং কষ্টসাধ্য না হয় তার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।"
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই এই মুহূর্তে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। তবে এত বছর পরেও আজিমভের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং তার দূররর্শী দৃষ্টিভঙ্গি গভীর আলোচনার দাবিদার।
অনুবাদ: জেনিফার এহসান