সাগরতলে ‘হেঁটে বেড়ানো’ নতুন মাছের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
মাছও হাঁটে। শুনতে অবাক লাগলেও গভীর সাগরে নতুন এক প্রজাতির মাছের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেটি হাঁটতে পারে। শুধু মাছই নয়, অনুসন্ধানে এমন শতাধিক অদ্ভুত জীবের সন্ধান মিলেছে, যেগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আগে জানতেন না।
মাছটির গায়ের রঙ টকটকে লাল। আকারেও খুব বড় নয়। মাথা থেকে পেট পর্যন্ত অংশটি গোলাকার বস্তুর মতো ফাঁপা। দেহের এই অংশটি অনেকটাই হাতে বোনা শালের (চাদর) মতো ও সুইয়ের মতো অসংখ্য কাঁটাযুক্ত। পেট থেকে লেজের অংশটি মাথার তুলনায় বেশ সরু। কাঁটাযুক্ত এই অংশটি সম্ভবত অন্য প্রাণির আক্রমণ থেকে এদের সুরক্ষা দিয়ে থাকে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এক প্রকার সি টোড (সি টোড হলো গভীর সমুদ্রের এক প্রকার অ্যাঙ্লারফিশ, যেগুলো তাদের মুখের সামনে ঝুলে থাকা উজ্জ্বল ধরনের এক অঙ্গের সাহায্যে শিকারকে আকৃষ্ট করে থাকে।)
এই সি টোডটির বিশেষ এক ধরনের পাখনা রয়েছে। যার ওপর ভর করেই সমুদ্রতলে জীবটি হেঁটে বেড়াতে পারে। এটি একদিক থেকে তার শিকারের একটি কৌশলও। এছাড়াও এতে সাঁতারের চেয়ে কম শক্তি খরচ হয় মাছটির।
বিজ্ঞানীদের সাগরতলের এই অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয় এ বছরের শুরুতে। তারা চিলির কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি অংশে এ অনুসন্ধান চালান। অনুসন্ধানের জন্য তারা পানির নিচে চলাচল উপযোগী একটি রোবটিক যান (আরওভি) পাঠান। সেই যান সাগরের পাঁচ হাজার ফুটেরও বেশি গভীরে অনাবিষ্কৃত বিষ্ময়গুলোর অনুসন্ধান চালায়।
অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা জীবন্ত নক্ষত্রপুঞ্জের মতো দেখতে অদ্ভুত এক প্রাণি, কাঁটাযুক্ত লম্বা ও সরু পা-বিশিষ্ট ক্রিমসন ক্রসটেইশান্স (কাঁকড়া জাতীয় প্রাণি), দৈত্যাকার স্পঞ্জ, সামুদ্রিক লিলির ক্ষেত্র, সাগরতলে বসবাসকারী অক্টোপাস ও ১০ ফুট লম্বা ব্যাম্বু কোরালসহ আলো বিচ্ছুরণ করতে পারা আরও বহু প্রজাতির সন্ধান পান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এগুলোকে নতুন প্রজাতি বলেই মনে হচ্ছে।
দলটির প্রধান বিজ্ঞানী ও চিলির ইউনিভার্সিটি অব নর্থের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী হাভিয়ার সেইয়ানস ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে এক ই-মেইল বার্তায় বলেছেন, 'যদিও সমুদ্রের এই অংশে নতুন প্রজাতির সন্ধান অপ্রত্যাশিত নয়, তবে কয়েক ডজন অদ্ভুত প্রজাতির সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর ও অনুপ্রেরণামূলক।'
সামুদ্রিক মরূদ্যান
অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রতলে নতুন আরও চারটি পর্বত চিত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলোকে সিমাউন্ট বলা হয়ে থাকে। এমন ছয়টি পর্বতের কথা বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানতেন। নতুন করে আরও চারটি সিমাউন্টের কথা জানা গেল।
বিজ্ঞানী দলটির সদস্য হান ম্যাক্সিমিলিয়ানো গেরা বলেন, সিমাউন্টগুলোর ট্রপোগ্রাফির অনন্য প্রকৃতির কারণে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু প্রজাতি কেবল নির্দিষ্ট সিমাউন্টেই পাওয়া যায়। এই অনন্য প্রকৃতির কারণে এসব প্রজাতি ওই পরিবেশে বাঁচতে ও মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলেন, 'ঠিক এ কারণেই আমরা এসব সিমাউন্ট থেকে ও এগুলোর আশে-পাশে যেসব প্রজাতির সন্ধান পেয়েছি, সেগুলোর বেশিরভাগই বৈশিষ্ট্যে অনন্য। বিশ্বের আর কোথাও এগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না।'
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) তথ্যমতে, বিশ্বে প্রায় এক লাখেরও বেশি সিমাউন্ট থাকতে পারে। এর মাত্র ০.১ শতাংশের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এসব প্রজাতির সবগুলোই সমুদ্রতলের পৃথক পৃথক জায়গা থেকে পাওয়া গেছে। এ কারণে বিজ্ঞানী সেইয়ান্স বলছেন, প্রতিটি সিমাউন্টই অনন্য।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক