সোমালিয়ার এক খেলার মাঠ, ফুটবলের পাশাপাশি এখানে কার্যকর হয় মৃত্যুদণ্ডও
সোমালিয়ার রাজধানী শহর মোগাদিসুর সমুদ্র সৈকতে রয়েছে বড় একটি মাঠ। তবে এ মাঠে যে কেবল স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে তা নয়, অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্যও ব্যবহার করা হয় মাঠটি। দেশটির সামরিক আদালতে বিচারের পর অপরাধীকে এখানে এনে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। খবর বিবিসির।
মাঠের এক পাশে পাশাপাশি পোঁতা রয়েছে কয়েকটি খুঁটি। অপরাধীকে প্রথমে খুঁটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো মাথা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ দলের সদস্যরা অপরাধীদের গুলি করে হত্যা করেন। তাদেরও মুখ ঢাকা থাকে।
এ পর্যন্ত যাদের এখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের অনেকেই সে দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত আল-শাবাবের সদস্য। সোমালিয়ার বৃহৎ একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ এ গোষ্ঠীর হাতে।
এই মাঠের পেছনেই রয়েছে একটি বসতি। সেখানে প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস। সেখানকার বাসিন্দা ফারতুন মোহাম্মাদ ইসমাইল বলেন, 'আমার ছোট ছোট পাঁচ ছেলে স্কুল থেকে ফিরেই ফুটবল খেলতে দৌড়ে সৈকতে চলে যায়। ওরা মাঠের ওই খুঁটিগুলো গোলপোস্ট বানিয়ে খেলে।'
সন্তানদের স্বাস্থ্য নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ফারতুন। কারণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর জায়গাটি পরিষ্কার করা হয় না। রক্তের ছিটেফোঁটা লেগে থাকে। এর মধ্যেই তার সন্তানেরা খেলাধুলা করছে। এতে ওদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
ফারতুন আরও জানান, তার সন্তানরা সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে অভ্যস্ত। কারণ ওরা ৩৩ বছর ধরে সংঘাতে জর্জরিত মোগাদিসুতে জন্মেছে। তারপরও ফারতুনসহ অন্য অভিভাবকরা অপরাধীদের রক্তের মধ্যে সন্তানদের খেলাধুলা করাকে একটু বেশি বলেই মনে করেন।
সাধারণত স্থানীয় সময় ভোর ৬টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে থাকে।
সাজা কার্যকরের সময় কেবল সাংবাদিকদের ডাকা হয়ে থাকে। তবে শিশুসহ উৎসুক স্থানীয়রাও সে সময় মাঠের চারপাশে ভিড় করেন। এজন্য অনেক অভিভাবকই তাদের শিশু সন্তানদের কোনো ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন।
১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সিয়াদ বারে সৈকতের তীরে উন্মুক্ত এ মাঠটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন আশেপাশের স্থানীয়রা যাতে অপরাধীদের শেষ পরিণতি দেখতে পারেন।
স্থানীয়রা জানান, তাদের শিশু সন্তানরা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভয় পায়। কারণ ওরা চোখের সামনে তাদের শুধু মানুষ হত্যা করতে দেখে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফাদুমা আব্দুল্লাহি কাসিম বলেন, 'রাতে ঘুম আসে না। সবসময়ই মনের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ বোধ করি। সকাল বেলা মাঝে মাঝে গুলির শব্দ কানে আসে। বুঝতে পারি কারো মৃত্যু হলো।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি সন্তানদের সবসময় ঘরের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। আমি বাইরে যেতে এবং আমার ঘরের কাছে বালুর মধ্যে রক্ত দেখতে পছন্দ করি না।'
এভাবে মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে স্থানীয়দের অনেকেই এক ধরনের ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ এটি সমর্থন করেছেন, বিশেষ করে আল-শাবাব সদস্যদের জন্য।
তবে ফাদুমা বিষয়টি সমর্থন করেন না। তিনি বলেন, 'এখানে যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে, আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। কিন্তু আমি মনে করি এটি অমানবিক।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক