চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞায় ট্রাম্পকে পেছনে ফেললেন বাইডেন
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুই দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব ক্রমেই আরও জটিল হচ্ছে। এমতাবস্থায় চীনা কোম্পানি ও ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞা প্রদানের দৌড়ে পূর্বসূরী ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন বাইডেন।
তারই সূত্র ধরে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ছয়টি চীনা কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে মোট ৩১৯ টি চীনা সত্ত্বার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল বাইডেন প্রশাসন।
যদিও ট্রাম্পকে চীনের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে। এমনকি বেইজিংয়ের বিরদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে তার সময়ে এই নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৩১৯টি।
সেক্ষেত্রে এটা অনেকটা দৃশ্যমান যে, জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে সময়ের সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নে অর্থনীতিকে টুল হিসেবে ব্যবহার করছে।
যেমন, বাইডেন প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রকাশ করে অত্যাধুনিক চিপ প্রযুক্তিতে চীনকে নতজানু করার চেষ্টা করছে।
তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্ব যেন আরও চরমে। এটিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেদের ভূখণ্ডের মূল অংশ হিসেবে দাবি করেন। অন্যদিকে ওয়াশিংটনে তাইওয়ানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
চায়না সেন্টারের কনফারেন্স বোর্ডের প্রধান আলফ্রেডো মন্টুফার-হেলু বলেন, "চীনের প্রতি কঠোর হওয়া, প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকারের বিধিনিষেধ আরোপ একটি থিম; যার দ্বিপক্ষীয় দিক রয়েছে। আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উভয় পক্ষই এমনভাবে প্রচারণা চালাবে যাতে তারা চীনের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে হয়।"
বাইডেন প্রশাসন অবশ্য ট্রাম্পের মতো শুল্ক আরোপ করে চাপ তৈরির কৌশল ত্যাগ করেছে। বরং তারা এমন সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যা এআইসহ ব্যবসায়িক নানা দিকে বেইজিংকে বাধা প্রদান করবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র আটটি কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। যার ফলে নিষেধাজ্ঞার দিক দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকেও পেছনে ফেলে বাইডেন প্রশাসন।
অন্যদিকে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিকে চীনের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করছে। চীনা কোম্পানির উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করাকে 'অর্থনৈতিক জবরদস্তি' বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হে ইয়াদং। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিংয়ে এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি একথা বলেন।
হে ইয়াদং বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবিলম্বে নিজেদের ভুল সংশোধন করা উচিত এবং চীনা কোম্পানিগুলির ওপর অযৌক্তিকভাবে চলমান দমন বন্ধ করা উচিত। কোম্পানিগুলোর আইনগত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য চীন প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।"
যদিও চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুটি মার্কিন কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। একইসাথে দেশটিতে থাকা কোম্পানিগুলোর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
যদি চীনে কোম্পানি দুটির উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি নেই। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছে তারা।
একবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়ে গেলে চীনা কোম্পানিগুলোকে খুব কমই ঐ তালিকা সরানো হয়। যদিও বাইডেন প্রশাসন গত নভেম্বর মাসে ফেন্টানাইল সংকট মোকাবেলায় একটি চুক্তির অংশ হিসাবে একটি চীনা সরকারী পরীক্ষাগারের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা চারটি ফার্ম চীনের সামরিক আধুনিকীকরণে সাহায্য করতে মার্কিন পণ্য কিনেছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে মার্কিন উদ্ভূত পণ্য কিনতে পারবে না। রয়টার্সের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মূলত কোম্পানিগুলো চীনা সামরিক বাহিনীকে এআই চিপ সরবারাহের সাথে যুক্ত।
মন্টুফার-হেলু বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় নিজেদের সুবিধা বজায় রাখাতে যা যা করা দরকার তা-ই করবে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে যা দ্বৈত ব্যবহার বলে বিবেচিত হয়।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান