‘ইরানের পাল্টা-আক্রমণ, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে, বাইডেন যা এড়াতে চেয়েছিলেন’
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন বলছে, ইরান থেকে ইসরায়েলে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা –মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতকে এমন দিকে নিতে চলেছে, যা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এড়াতেই চেয়েছিলেন।
যদিও সিএনএন বরাবরের মতো উহ্য রাখে ইসরায়েলের উস্কানি। হামাসকে নির্মুলের নামে গাজা ভূখণ্ডে গণহত্যা শুরুর পর থেকেই ইসরায়েল লেবানন ও সিরিয়ায় বিমান হামলা করে আসছে। কিন্তু, দামাস্কাসে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার ঘটনা ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানায় ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডস। নিহতদের মধ্যে বিপ্লবী গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং তার সহযোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমিও ছিলেন।
এই অবস্থায়, প্রতিশোধমূলক পাল্টা-হামলা না চালিয়ে আর উপায় ছিল না তেহরানের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রকেও ইরান অন্যান্য দেশের মাধ্যমে কূটনৈতিক চ্যানেলে এই বার্তা পাঠায়।
তবে ইরান-ইসরায়েলের এই সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যেজুড়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এরমধ্যেই পাল্টা-হামলার কথা বলছেন। আর সেটা করা হলে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিগুলোকেও কোমর বেঁধে নামতে হবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায়।
ইতোমধ্যেই ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তেল আবিবকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। তবু মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থহানি হবে এমন শঙ্কা রয়েছে। এতে চীনকে ঠেকাতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারবে না।
এই অবস্থাতেই হয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলা। ১ এপ্রিলে কনস্যুলেটে হামলার দুই সপ্তাহ পরে ইরান এই হামলা করেছে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব রাষ্ট্রপতিই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনে অবিচল ছিলেন, বাইডেনও জায়নবাদী রাষ্ট্রটির কট্টর সমর্থক। তবে এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তিনি যুদ্ধও এড়াতে চান।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের আগুন জিইয়ে রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকার তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করছেন এমন সমালোচনা আছে। তিনি ইরানে হামলার নির্দেশও দিতে পারেন। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকেও তখন যুদ্ধে নামতে হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন অনিশ্চিত এক পথে রয়েছে।
ইরানের সাথে তাঁর আঞ্চলিক প্রক্সি বাহিনীগুলোও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলায় একযোগে কাজ করতে পারে। অনিশ্চয়তায় এটিও নতুন মাত্রা বলে জানান তাঁরা। ইসরায়েল ইরানি হামলার জবার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁদের ইসরায়েলি সমকক্ষদের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তবে তাঁদের মূল উদ্দেশ্য বৃহত্তর যুদ্ধ এড়ানো– এমন দাবিই করেছে সিএনএন।
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের বছরে বাইডেন যথেষ্ট চাপের মধ্যে আছেন। তাঁর নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্তেরই বড় প্রভাব পড়বে ভোটারদের মধ্যে। ৭ অক্টোবরের পর স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান না জানানোয় এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সমর্থন কমেছে।
ইরানের হামলার কথা শুনে ছুটি না কাটিয়েই জরুরী সভায় যোগ দিতে ছুটে আসেন বাইডেন। মূলত ইরানের হামলার ধরন সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই তিনি নড়েচড়ে বসেন। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা ছিল সভাকক্ষে।
গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোনালাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের কোনো ধরনের পাল্টা-আক্রমণ সমর্থন করবে না যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওজ একথা জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এই কর্মকর্তার মতে, বাইডেন নেতানিয়াহুকে আশ্বস্ত করে বলেন, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর যৌথ প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ ইরানের আক্রমণ প্রতিহত করবে।
তবে বাইডেন প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই মনে করেন, দামাস্কাসে ইরানি কনস্যুলেটে হামলায় ইসরায়েল যতোটা শক্তিপ্রয়োগ করেছে, তাঁর বহুগুণ করেছে ইরান। তাঁদের এই মনোভাব বাইডেনের যুদ্ধ এড়ানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তাছাড়া, ইরানি হামলার পরে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করছে ইসরায়েল, সিএনএন বলছে, এর ওপরই নির্ভর করবে তেল আবিবের পরবর্তী পদক্ষেপ। এই বিশ্লেষণ বাইডেন প্রশাসনকেও প্রভাবিত করবে বলে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান।
অনুবাদ: নূর মাজিদ