ইরানের হামলার পর গাজা যুদ্ধের কী হবে তা নিয়ে ভাবছে ইসরায়েল
ইরানের নিক্ষিপ্ত মিসাইল ও ড্রোন ইসরায়েল এবং এর মিত্ররা প্রতিহত করার পর অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, এ ঘটনায় গাজা যুদ্ধের ওপর কী প্রভাব পড়বে।
এ মাসে সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানের কনসুলেটে হামলায় ইরানের তিন শীর্ষ কমান্ডারসহ সাত কর্মকর্তা নিহত হন। ইসরায়েল এ হামলা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান।
এ ঘটনা ঘটেছে গাজায় বর্তমানে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মাঝে। সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইরান থেকে অর্থ ও অস্ত্র সহযোগিতা পায়।
গাজা যুদ্ধ বর্তমানে ছয়মাসে পড়েছে। ইরানের সঙ্গে আরও সরাসরি সংঘাত গাজায় যুদ্ধপরিস্থিতিকে বদলে দেবে কি না তা নিয়ে বিভক্ত ইসরায়েলি সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, ইসরায়েল ইরানের ওপর বড় আকারের আক্রমণ চালাবে কি না তার ওপর নির্ভর করবে গাজার পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে। আবার অনেকের মতে, রোববারের হামলায় গাজা উপত্যকার ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক পরিচালক শ্লোমো ব্রম বলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের ওপর বড় ধরনের পালটা আঘাত করে, তাহলে একটি বহুমুখী যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এতে করে ইসরায়েলকে গাজা থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলতে হতে পারে।
বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের বিষয়ে জেনারেল ব্রম বলেন, ইসরায়েল হয়তো রাফা আক্রমণের পরিকল্পনা কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারে। ইসরায়েলের মতে, রাফা হচ্ছে হামাসের সর্বশেষ ঘাঁটি।
'একাধিক রণাঙ্গনে যুগপৎ, তীব্র যুদ্ধ আমাদের জন্যও স্বস্তিকর কিছু হবে না,' বলেন এ জেনারেল।
রাফায় অভিযান চালানো থেকে পিছিয়ে আসতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেখানে পদাতিক সেনা পাঠানোর শপথ করেছেন। রোববার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, রাফা আক্রমণে আইডিএফ-এর পরিকল্পনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না ইরানের হামলা।
জেনারেল ব্রম মনে করেন, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বড় ধরনের সংঘাত লাগলে তার জেরে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে চলমান যুদ্ধ শেষ হতে হলে ইসরায়েল, ইরান, হামাস ও হিজবুল্লাহর অংশগ্রহণে বড় ধরনের যুদ্ধবিরতির দরকার হবে।
তিনি বলেন, 'একটা ধারণা প্রচলিত আছে, কোনো একটা সংকটের সমাধান করতে হলে তার আগে ওই সংকটকে একটি তীব্রতর মাত্রায় পৌঁছাতে হয়'। তার মতে, যুদ্ধবিরতির পর ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হলে ইরান হয়তো এর আঞ্চলিক প্রক্সিদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলবে।
রোববার বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি ইসরায়েলের ওয়ার ক্যাবিনেট। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল। তবে কীভাবে এবং কখন এ জবাব দেওয়া হবে, তা নিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তবে অন্যান্য সামরিক বিশেষজ্ঞরা ইরানের আক্রমণ ও গাজা যুদ্ধের মধ্যে কোনো ধরনের সম্ভাব্য সংযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
'এখানে কোনো সংযোগই নেই,' বলেন ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাবাহিনীতে এক সময় কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমস জিলিয়াড।
জিলিয়াডের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যথেষ্ট রসদ রয়েছে।
জিলিয়াডের ধারণার সঙ্গে একমত আরও কয়েকজন বিশ্লেষকও। তারা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে ধরনের রসদ দরকার, তা গাজায় অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় রসদের চেয়ে ভিন্ন। তারা বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার। অন্যদিকে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়তে ইসরায়েলি আর্মির মূলত পদাতিক সেনা, ড্রোন ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার প্রয়োজন।
'এ দুটোর মধ্যে মধ্যে বাস্তবিক কোনো টান নেই,' বলেন ইসরায়েলের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক প্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিওরা ইলিয়াঁদ।
ইসরায়েলের সবচেয়ে কাছের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র গাজা যুদ্ধের সূচনায় ইসরায়েলকে বড় পরিসরে সমর্থন জানিয়েছিল। তবে গাজায় মৃত্যুহার বাড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অসন্তুষ্টির কথা বারবার ইঙ্গিত দিয়েছে, সেই সঙ্গে রাফায় বড় কোনো আক্রমণ পরিচালনা না করতে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছে।
রোববার রাতে ইসরায়েলের হয়ে ইরানের ড্রোন ও মিসাইল ভূপাতিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির এ সমর্থন তেল আবিবের ওপর ওয়াশিংটনের আরেকটু বেশি ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।