যে ১০ শহরে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ারদের বসবাস
চলতি বছর বিশ্বে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৭৮২ জনে। এক্ষেত্রে এই ধনকুবের ব্যক্তিরা কোথায় বসবাস করেন তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। যদিও এদের কেউ কেউ শখ করে কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বাস করে থাকেন। তবে বেশিরভাগই থাকেন উন্নত সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ বিশ্বের নামিদামি সব শহরে।
এমনকি ফোর্বসের সর্বশেষ বিলিওনিয়ারের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ বিলিওনিয়ারের বসবাস মাত্র ছয়টি দেশের দশ শহরে। যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
এক্ষেত্রে ফোর্বস বিলিওনিয়ারদের মধ্যে ৫৯ জন প্রাথমিকভাবে ঠিক কোথায় বাস করেন সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি। তাই শীর্ষ শহরের তালিকাটি করার ক্ষেত্রে তাদেরকে বিবেচনায় আনা হয়নি।
১। নিউ ইয়র্ক সিটি
১১০ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত নিউ ইয়র্ক সিটি। যা পূর্বের বছরের তুলনায় নয়জন বেশি। এদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৯৩ বিলিয়ন ডলার।
শহরটিতে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মাইকেল ব্লুমবার্গের বসবাস। যার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও শহরটিতে রয়েছে কোচ ইন্ডাস্ট্রির উত্তরাধিকারী জুলিয়া কোচের বসবাস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৪.৩ বিলিয়ন ডলার।
নিউ ইয়র্ক গত ১১ বছর ধরে বিলিওনিয়ারের শহরের তালিকায় রাজত্ব করছে। ব্যতিক্রম হিসেবে শুধু ২০২১ সালে বেইজিং শীর্ষে উঠে এসেছিল।
শহরটির নতুন বিলিওনিয়ারের তালিকায় রয়েছে ফ্রেঞ্চ সুগন্ধি কোম্পানি ইন্টারপারফামসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিন মাদার (১.১ বিলিয়ন) এবং ইসরায়েলি ক্লাউড সিকিউরিটি স্টার্ট-আপ উইজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আসাফ র্যাপাপোর্ট (১ বিলিয়ন)।
২। মস্কো ও হংকং (যৌথভাবে)
৭৪ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মস্কো ও হংকং। এক্ষেত্রে বছর দুই আগেও তালিকায় মস্কো ছিল ১২ নম্বরে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শহরটিতে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। বর্তমানে শহরটির বিলিওনিয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৭৮ বিলিয়ন ডলার।
মস্কোর শীর্ষ ধনী তালিকায় রয়েছে ভ্যাগিট আলেকপেরভ; যার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮.৬ বিলিয়ন। গত বছরের তুলনায় শহরটিতে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা ১২ জন বেড়েছে। যাদের মধ্যে অন্যতম গ্লোরিয়া জিনসের ভ্লাদিমির মেলনিকভ (১.৭ বিলিওন)। যিনি গত দুই বছরে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম ও জারার ৬৫০টি স্টোর বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে লাভবান হয়েছেন।
হংকংয়ে বিলিওনিয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২৬ বিলিয়ন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ধনী লি ক্যা-শিং-এর সম্পদের পরিমাণ ৩৭.৩ বিলিয়ন ডলার। শহরটিতে গত বছরের তুলনায় বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে চারজন।
হংকং-এর নতুন বিলিওনিয়ারের মধ্যে রয়েছে টিথার ও বিটফিনেক্সের সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা জিন-লুই ভ্যান ডের ভেল্ডে (৩.৯ বিলিয়ন ডলার)। এছাড়াও নতুন করে বিলিওনিয়ার হয়েছেন হরাইজন ভেঞ্চারসের সোলিনা চাউ (৩.১ বিলিয়ন); যিনি ফেসবুক, স্পটিফাই, জুমের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিতে প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিল।
৪। মুম্বাই
৬৯ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৭৯ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি; যার সম্পদের পরিমাণ ১১৬ বিলিয়ন ডলার।
শহরটিতে চলতি বছর নতুন করে ১১ জন বিলিওনিয়ার এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। এছাড়াও বিলিওনিয়ারের তালিকায় রয়েছে মুম্বাই ভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনস্ট্রাকশন জায়ান্ট শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের শাপুর মিস্ত্রি (৯.৯ বিলিয়ন)।
৫। বেইজিং
৬৩ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চীনের রাজধানী বেইজিং। যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ২১১ বিলিয়ন ডলার। এদের মধ্যে শীর্ষ ধনী জ্যাং ইমিং। যার সম্পদের পরিমাণ ৪৩.৪ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ সালের তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নেওয়ার পর থেকে শহরটি প্রায় ৩২ জন বিলিয়নিয়ার হারিয়েছেন। একইসাথে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে পূর্বের বছরের তুলনায় তাদের সম্পদ কমেছে শতকরা ১৪ ভাগ।
তবুও শহরটি চলতি বছর নতুন দুইজন বিলিওনিয়ার পেয়েছে। তারা হলেন এআই সফটওয়্যার কোম্পানি ৪প্যারাডাইম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও দাই ওয়েনুয়ান (১.৬ বিলিয়ন) এবং বেইজিংভিত্তিক বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি লি অটো-এর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর ঝেং ফ্যান।
৬। লন্ডন
৬২ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে লন্ডন। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এদের মধ্যে শীর্ষ ধনী লেন ব্লাভাটনিক; যার সম্পদের পরিমাণ ৩২.১ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছর বিলিওনিয়ারের তালিকায় নতুন করেন কেউ যুক্ত হয়নি। উলটো গত আগস্ট মাসে মারা গিয়েছেন শহরটির অন্যতম বিলিওনিয়ার মোহাম্মদ আল ফায়েদ। তিনি লন্ডনের ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডসের সাবেক মালিক এবং ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার সাথে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত দোদি ফায়েদের বাবা।
৭। সাংহাই
৫৪ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে চীনের আরেক শহর সাংহাই। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬৭ বিলিয়ন ডলার। এদের মধ্যে শীর্ষ ধনী কলিন হুয়াং; যার মোট সম্পদ ৩৮.৯ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের তুলনায় শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ বিলিওনিয়ার কমেছে সাংহাইতে। আর দেশটির অন্যান্য শহরের মতো এখানেও অর্ধেক বিলিওনিয়ারের পূর্বের তুলনায় সম্পদের পরিমাণও কমেছে।
৮। লস এঞ্জেলস
৫৩ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে লস এঞ্জেলস। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ২২২ বিলিয়ন ডলার। এদের মধ্যে শীর্ষ ধনী জন টু; যার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার।
শহরটির বিলিওনিয়ারের তালিকায় রয়েছেন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে তারকারাও। এদের মধ্যে এনবিএ গ্রেট লেব্রন জেমস (১.২ বিলিয়ন), কিম কার্ডাশিয়ান (১.৭ বিলিয়ন) ও সংগীতশিল্পী রিহানা (১.৪ বিলিয়ন)।
৯। সিঙ্গাপুর
৫২ জন বিলিওনিয়ার নিয়ে তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫৬ বিলিয়ন ডলার। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ধনী ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডুয়ার্ডো সাভেরিন; যার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮ বিলিয়ন।
সিঙ্গাপুর বরাবরই অর্থের ছড়াছড়ির জন্য বিখ্যাত। শহরটির ধনীদের মধ্যে তিন ভাই বখতিয়ার করিম (১.৪ বিলিয়ন), বুরহান করিম (১.২ বিলিয়ন) এবং বাহারি করিম (১.২ বিলিয়ন) অন্যতম। যারা একত্রে মুসলিম মাস নামের একটি একটি পাম অয়েল ফার্মের মালিক।
১০। সান ফ্রান্সিসকো
৫০ জন বিলিওনিয়ারের মোট ১৮৫ বিলিয়ন সম্পদ নিয়ে তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে সান ফ্রান্সিসকো। শহরটির শীর্ষ ধনী ফেসবুক ও আসানার ডাস্টিন মস্কোভিটজ; যার সম্পদের পরিমাণ ১৮.৩ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়াও শহরটির ধনীদের তালিকায় রয়েছে স্ট্যানফোর্ড কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক ডেভিড চেরিটন (১২.৬ বিলিয়ন ডলার), ওপেনএআইয়ের প্রধান ও প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী স্যাম অল্টম্যান (১ বিলিয়ন ডলার)।
চলতি বছর বিলিওনিয়ারের শীর্ষ ১০ শহরের তালিকা থেকে ছিটকে গেছে শেনজেন। চীনা শহরটি গত বছরেও অষ্টম অবস্থানে ছিল। কিন্তু এই বছর ১৭ জন বিলিওনিয়ারের তালিকা থেকে বাদ পরে যাওয়ায় শহরটি অবস্থান করছে ১২ তম অবস্থানে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান