কায়রোতে ফের জোরদার হয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির চুক্তি করতে ফের জোরদার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল (শনিবার) কায়রোতে শুরু হয়েছে বৈঠক।
এই বিষয়ে হামাস জানায়, তাদের প্রতিনিধি দল সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করার পর একটি 'ইতিবাচক মনোভাব' নিয়ে সফর করছে। স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র সংগঠনটি জানায়, "আমরা ফিলিস্তিনিদের দাবি পূরণ করতে একটি চুক্তি সম্পাদন করতে বদ্ধপরিকর।"
এদিকে ইসরায়েলের মিত্র মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, "জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্য 'যুদ্ধবিরতি' গ্রহণ করা উচিত নয়।"
এদিকে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হামাসের প্রতিনিধিরা কায়রোতে পৌঁছেছেন। এটি বাস্তবায়িত হলে আশা করা হচ্ছে যে, জিম্মিদের মুক্ত করার বিনিময়ে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ সাময়িকভাবে বন্ধ হবে।
গত রাতে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিটিকে 'বাস্তবায়ন' করতে চায়। তবে এক্ষেত্রে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে উভয় পক্ষ এখনও ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। এক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি হচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থায়ী না-কি অস্থায়ী হবে সেটি নিয়ে।
এক্ষেত্রে হামাসের যুক্তি এই, যে কোনো চুক্তি যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ইসরায়েল এমনভাবে চুক্তি করতে চাচ্ছে যখন তারা পাশাপাশি গাজায় সক্রিয় থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে যে, আলোচনায় জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সময় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির ব্যাপারটি উঠে এসেছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে, হামাসের সাথে চুক্তি হলেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে নতুন করে সামরিক স্থল অভিযান চালানো হবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম গতকাল (শনিবার) জানিয়েছে যে, সর্বশেষ দফা আলোচনা সত্ত্বেও দেশটির অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলের বৃহত্তম কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন আক্রমণকে সমর্থন করতে চাইছে না। কেননা এতে করে উল্লেখযোগ্য হারে বেসামরিক নাগরিক হতাহত হতে পারে। বরং হোয়াইট হাউজ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করার জন্য পরিকল্পনার দিকে জোর দিয়েছে৷ এক্ষেত্রে আনুমানিক ১৪ লাখ মানুষ রাফাহ ভূখণ্ডের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে গতকাল (শনিবার) যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ইসরায়েলের ওয়ার কেবিনেটের সদস্য, মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ বলেন, "রূপরেখার একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। যখন সেটি পাওয়া যাবে তখন ওয়ার ম্যানেজমেন্ট ক্যাবিনেট আলোচনা ও বৈঠক করবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমি 'রাজনৈতিক সোর্স' এবং সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অফিসিয়াল আপডেটের জন্য অপেক্ষা করতে বলছি।"
এদিকে মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এর পরিচালক উইলিয়ামস বার্নস সর্বশেষ আলোচনায় মধ্যেস্ততার জন্য কায়রো সফর করেছেন। এ সম্পর্কে দুই মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে জানান, ব্লিঙ্কেনও আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করতে এই সপ্তাহে আবার ইসরাইল সফর করেছেন।
এদিকে অ্যারিজোনায় গত শুক্রবার বক্তৃতায় ব্লিঙ্কেন বলেন, "গাজার জনগণ ও যুদ্ধবিরতির মধ্যে একমাত্র বাধা হামাস।"
এখন পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে নভেম্বরের শেষের পর থেকে যুদ্ধবিরতি বা জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। এই আলোচনায় এমন কিছু মুহূর্ত ছিল যেখানে একটি নতুন চুক্তি হতে পারে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগেই তা বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
এমনকি সর্বশেষ এই আলোচনার মধ্যেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আলোচনার সাথে যুক্ত একটি সূত্র বিবিসিকে বলেন, আলোচনা জটিল অবস্থায় রয়েছে এবং যেকোনো অগ্রগতি হতে এখনও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। একটি সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছে যে, যদি গোষ্ঠীটি যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করতে থাকে তবে যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে শনিবার তেল আবিবের ডেমোক্রেসি স্কয়ারে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। জিম্মিদের স্বজনরাও শহরটির কিরিয়া সামরিক ঘাঁটিতে জড়ো হয়েছিল সরকারকে একটি চুক্তি করার জন্য আহ্বান জানাতে। কেউ কেউ নেতানিয়াহুকে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিকে সম্ভাবনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
৮০ বছর বয়সী জিম্মি ইয়োরামের পুত্রবধূ আয়ালা মেটজগার বলেন, "জিম্মিদের মুক্তির মূল্য হিসেবে সরকারকে যুদ্ধ শেষের প্রস্তাবে রাজি হতে হবে।"
গত ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলের আচমকা হামলা চালায় হামাস। এতে কমপক্ষে ১২০০ জন নিহত হয়। একইসাথে ২৫০ জনেরও বেশি জিম্মি হয়।
এরপর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪,৬৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৭,৯০৮ জন আহত হয়েছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান