নির্বাচনী প্রচারণার জন্য জামিন পেলেন কেজরিওয়াল, মোদি বিরোধীদের উল্লাস
দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার (১০ মে) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অস্থায়ী জামিন দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
সেইসঙ্গে আদালত জানিয়েছেন, মুক্তির পর নির্বাচনী প্রচার চালাতেও কোনো বাধা নেই কেজরিওয়ালের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই কট্টর সমালোচকের মুক্তির বিষয়ে শীর্ষ আদালত জানান, আগামী ১ জুন পর্যন্ত কেজরিওয়াল জামিনে মুক্ত থাকবেন। কারণ ১ জুন সাত দফার শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর পরদিন অর্থাৎ আগামী ২ জুন তাকে কারাগারে ফিরে যেতে হবে।
গত ১৯ এপ্রিল ভারতে লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। গত ৭ মে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে। লোকসভার মোট ৫৪৩ আসনের অর্ধেকেরও বেশি আসনের ভোট এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ) বর্তমানে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লি এবং উত্তরের রাজ্য পাঞ্জাব শাসন করছে। রাজ্য দুটির ভোটগ্রহণ হবে যথাক্রমে আগামী ২৫ মে এবং ১ জুন। সামগ্রিকভাবে গণনা ও ভোটের ফল বের হবে আগামী ৪ জুন।
শুক্রবার আদালতের নির্দেশের পর কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনিতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, 'আজ গণতন্ত্রের বিজয়ের দিন।'
আদালতের আদেশ শোনার পর আপ সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। রাজধানী দিল্লিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হয়ে তারা নেচে, গেয়ে, ড্রাম বাজিয়ে এবং স্লোগান দিয়ে কেজরিওয়ালের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।
এ সময় সমর্থকরা মোদিবিরোধী স্লোগানও দেন।
দিল্লির সরকারের পরিবেশমন্ত্রী ও আপের জ্যেষ্ঠ নেতা গোপাল রাই বলেন, 'যারা দেশ, সংবিধান ও গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, আজ সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সেসব মানুষের হৃদয়ে একটি আশার আলো জাগিয়েছে। এটি সত্যের জয়।'
গত সপ্তাহে তার গ্রেপ্তারকে চ্যালেঞ্জ করে কেজিরওয়াল যে আবেদন পেশ করেছিলেন। ওই আবেদনের শুনানিকালে আদালত বলেছেন, নির্বাচনের কারণে কেজরিওয়ালকে অস্থায়ী জামিন দেওয়া যেতে পারে।
বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছে, মোদি সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে বিরোধীনেতাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মোদি সরকার।
গত কয়েক বছর ধরে কেজরিওয়াল অভিযোগ করে আসছেন, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, দুর্নীতিকে মদদ দিচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতাধীন সাংবিধানিক ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ করছে।
ভারতের আর্থিক অনিয়ম তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গত ২১ মার্চ আবগারি নীতিসংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করে কেজরিওয়ালকে। এই অভিযোগ কেজরিওয়াল ও তার দল অস্বীকার করেছে।
তবে মোদি ও তার সরকারের দাবি, ইডি স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং এর ওপর সরকারের কোনো প্রভাব নেই।
গত ১ এপ্রিল থেকে কেজরিওয়াল বিচার-পূর্ব কারাবরণ করছেন। এই মামলায় আরও দুজন শীর্ষ আপ নেতা গ্রেপ্তার রয়েছেন। এরপরেই দলের প্রচারণার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তার স্ত্রী সুনিতা।
চলতি নির্বাচনে দুই ডজনেরও বেশি বিজেপি বিরোধী দল নিয়ে গঠিত জোট 'ইনডিয়া'-এর নেতারা কেজরিওয়ালের মুক্তির আদেশের প্রশংসা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স' হ্যান্ডেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেজরিওয়ালের জামিনের আদেশে তিনি বেশ খুশি।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচনের জন্য এই সিদ্ধান্তটি খুব সহায়ক হবে।
কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা দখলের আকাঙ্ক্ষায় থাকা মোদির ইশারায়, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এর জবাবে ইডির আইনজীবী যুক্তি দেন, শুধু নির্বাচনের কারণে একজন রাজনীতিককে জামিন দেওয়ার মাধ্যমে সমাজকে এই বার্তা দেওয়া হলো যে, সবার অধিকার সমান নয়। অন্যান্য নাগরিকের সঙ্গে কিছু মানুষের তফাত রয়েছে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি