ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা কারাগার ও বেত্রাঘাত থেকে বাঁচতে ইউরোপে পালালেন
প্রশংসিত ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রাসুলফ জানিয়েছেন, ইরানের একটি আদালত জাতীয় নিরাপত্তার অভিযোগে তাকে কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়ার পর তিনি নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপের অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গেছেন।
রাসুলফ সোমবার (১৩ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে ইরান সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি নিন্দা জানিয়ে অত্যাচারী এবং নিপীড়ক শাসক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন যেটিতে তাকে ইরানের পার্বত্য সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখা গেছে।
তিনি বলেছেন, "ভৌগোলিক ইরান আপনাকে ধর্মীয়ভাবে অত্যাচার করলেও সাংস্কৃতিক ইরান লক্ষ লক্ষ ইরানিদের মনে বেঁচে আছে যারা আপনাদের বর্বরতার কারণে ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল এবং কোনও শক্তি তার (সাংস্কৃতিক ইরান) ওপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারে না। আজ থেকে আমি সাংস্কৃতিক ইরানের বাসিন্দা।"
১২ মে একটি পৃথক বিবৃতিতে রাসলুফ জানিয়েছিলেন, তার আইনজীবীরা তাকে বলেছে যে তার কারাদণ্ড স্বল্প নোটিশে কার্যকর করা হবে। তাই তিনি ইরান থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সিএনএন মন্তব্যের জন্য ইরানি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। তার আইনজীবী বাবাক পাকনিয়া গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ইরানের একটি আদালত রাসলুফকে আট বছরের কারাদণ্ড ও বেত্রাঘাতের সাজা দিয়েছেন কারণ আদালত তার সিনেমা ও তথ্যচিত্রগুলোকে 'দেশের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিপ্রায়ে যোগসাজশের উদাহরণ' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
২০২২ সালে ঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তার মাশা আমিনির হেফাজতে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ইরানি কর্তৃপক্ষ ভিন্নমতকে দমন করতে অভিযান ও ধরপাকড় চালায়। রাসলুফকে সে সময় ইরানের বেশ কয়েকজন নামি শিল্পীর মতো ভিন্নমত পোষণের দায়ে ইয়রানি কর্তৃপক্ষ দোষী সাব্যস্ত করে।
রাসলুফের সাম্প্রতিক সিনেমাগুলো ইরান সরকারের সমালোচনা করেছে। তিনি শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি দলের অংশ ছিলেন যারা আবাদানে ২০২২ সালের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়ার প্রতি নিন্দা জানিয়েছিলেন। সেখানে একটি ভবন ধসের কারণে ৪০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল।
রাসলুফ ২০২০ সালে বার্লিনেল উৎসবে "দেয়ার ইজ নো ইভিল" এর জন্য সেরা চলচ্চিত্রের গোল্ডেন বিয়ার জিতেছিলেন এবং তার সিনেমা "এ ম্যান অফ ইন্টিগ্রিটি" ২০১৭ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে "সার্টেন রিগার্ড" সম্মানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিল।
তার সর্বশেষ কাজ "দ্য সিড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ" আগামী সপ্তাহে কানে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হবে। তবে তিনি উপস্থিত হতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
রাসলুফফ উল্লেখ করেননি কীভাবে তিনি ইরান থেকে পালাতে পেরেছেন। শুধু বলেছেন, বন্ধু ও পরিচিতদের সহায়তায় তিনি গোপনে এটি করতে পেরেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ইরানের একটি আদালত রাসলুফকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং "শাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার" এর অভিযোগে তাকে দুই বছরের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা থেকে নিষিদ্ধ করেছিল।
এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ এর আগে তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছিল এবং তার কাজের জন্য তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছিল।