বিশ্বরেকর্ড গড়ে পাখির একটি পালকই বিক্রি হলো ২৮ হাজার ডলারে!
একটি পাখির একটিমাত্র পালক নিলামে বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৪১৭ ডলারে—বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। বিশ্বের আর কোনো পাখির পালক এর আগে এত দামে বিক্রি হয়নি। পালকটি নিউজিল্যান্ডের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া হুইয়া পাখির।
নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েবস অকশন হাউস জানিয়েছে, প্রথমে আশা করা হয়েছিল পালকটি ৩ হাজার ডলারে বিক্রি হতে পারে। কিন্তু এবারের পালকটি এর আগে বিক্রি হওয়া একই প্রজাতির পাখির আরেকটি পালকের চেয়ে ৪৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়ে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরি জাতির কাছে হুইয়া একটি পবিত্র পাখি। মাওরি গোত্রপ্রধান ও পরিবারপ্রধানেরা প্রায়ই মাথায় এ পাখির পালক পরতেন। পাশাপাশি হুইয়ার পালক উপহার দেওয়া বেচাবিক্রির জন্য ব্যবহারের প্রচলনও ছিল মাওরিদের মধ্যে।
মিউজিয়াম অভ নিউজিল্যান্ড-এর তথ্যানুসারে, হুইয়া পাখি সর্বশেষ নিশ্চিতভাবে দেখা গিয়েছিল ১৯০৭ সালে। তবের এর পরের বিশ-ত্রিশ বছর ধরেও অসমর্থিত সূত্রে এই পাখি দেখার খবর পাওয়া গেছে।
হুইয়া ছিল নিউজিল্যান্ডের ওয়াটলবার্ড গোত্রের ছোট্ট গানের পাখি। লাফানোর দক্ষতা এবং মনোরম পালকের জন্যও সুপরিচিত ছিল পাখিটি। এ পাখির শরীরে পালকের বেশিরভাগই কালো, আর লম্বা লেজের শেষপ্রান্ত ছিল সাদা।
সোমবার বিক্রি হওয়া পালকটি 'খুবই ভালো অবস্থায়' ছিল জানিয়েছেন ওয়েবস অকশন হাউসের ডেকোরেটিভ আর্টস বিভাগের প্রধান লিয়াহ মরিস।
তিনি বিবিসিকে বলেন, 'পালকটা দারুণ চকচকে অবস্থায় আছে, আর কোনো পোকাও ওটার ক্ষতি করতে পারেনি।'
লিয়াহ মরিস আরও জানান, নিলামকারী প্রতিষ্ঠান পালকটি আর্কাইভের জন্য ব্যবহার করা কাগজে, ইউভি-সুরক্ষিত কাচের বাক্সে রেখেছে। ফলে সেটি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
পালকটি মাওরিদের তৈরি জিনিসপত্র সুরক্ষার জন্য চালু করা টাওঙ্গা টুটুরু ব্যবস্থার আওতায় নিবন্ধিত। এ ব্যবস্থার আওতায় যাদের কাছে মাওরিদের তৈরি জিনিস সংগ্রহের লাইসেন্স আছে কেবল তারাই এ ধরনের নিলামে অংশ নিতে পারেন। নিউজিল্যান্ডের মিনিস্ট্রি অভ কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ-এর অনুমতি ছাড়া এসব জিনিস দেশের বাইরে নেওয়া যাওয়া যায় না।
লিয়াহ মরিস মনে করেন, নিউজিল্যান্ডের মানুষের ব্যাপক উৎসাহও পালকটির দাম বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
অতীতে মাওরিদের কাছে হুইয়ার পালক ছিল মর্যাদার চিহ্ন। ইউরোপীয়দের আগমনের আগে থেকেই নিউজিল্যান্ডে হুইয়া বিরল পাখি ছিল। নিউজিল্যান্ডে আসা ব্যক্তিদের এই পাখি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে পাখিটি সংগ্রাহক এবং ফ্যাশন ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যে পরিণত হয়। যার জেরে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায় হুইয়া।