রামমন্দির, মোদি ম্যাজিক, বুথফেরত সমীক্ষা- কোনোটাই কাজে দিল না মোদির
রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি অথবা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি— এসব কিছুর পরেও ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি।
'এক দেশ এক ভোট' অথবা '৪০০ পার' স্লোগান যেমন কাজ করেনি, তেমনি মোদি জাদুতেও এবারের লোকসভায় ২৭২ আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এখন সরকার গঠন করতে শরিক দলের সাহায্যই নিতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে।
সাত ধাপে ভোটগ্রহণের পর ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে গতকাল (৪ জুন)। বুথফেরত জরিপ সংস্থাগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, এবারও বিপুল বিজয় পাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ। কিন্তু প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু হতেই সমস্ত বুথফেরত জরিপের ভবিষ্যদ্বাণী উল্টে দিয়েছে বিরোধী জোট ইনডিয়া। মাত্র সাড়ে ১১ মাস আগে গড়া বিরোধী জোট ইনডিয়া জোট নির্বাচনে কঠিন লড়াই করলো এনডিএ জোটের সাথে।
৫৪৫ আসনের (দুটি মনোনীত আসন-সহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন। বিজেপি একক ভাবে জিতেছে ২৪০ আসন। তাদের নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ জিতেছে ২৯২ আসন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০৩। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ০.৭ শতাংশ কম ভোট পেয়ে বিজেপি হারিয়েছে ৬৩ আসন।
অন্য দিকে এ লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত পুনরুত্থান হল কংগ্রেসের। তারা পেতে পেয়েছে ৯৯ আসন। ইনডিয়া জোট পেয়েছে মোট ২৩৩ আসন।
দেশের তিন বৃহত্তম রাজ্য (জনসংখ্যার নিরিখে) উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে হেরেছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি-কংগ্রেসের জোট এবং মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-এনসিপি (শরদ পওয়ার)-এর 'মহাবিকাশ অঘাড়ী' জোট বড় ধাক্কা দিয়েছে মোদির দলকে। পশ্চিমবঙ্গে সেই 'দায়িত্ব' একাই পালন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল।
মাত্র এক বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথ মঞ্চ 'ইনডিয়া' (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-র নির্বাচনে প্রাপ্ত ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
আসন সমঝোতা নিয়ে আরো কৌশলী হলে বিহার, দিল্লি এমনকি, মহারাষ্ট্রেও ইনডিয়া'র ফল আরো ভালো হত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই।
ভোটের হিসাব বলছে, মহারাষ্ট্রের বিআর অম্বেডকরের নাতি প্রকাশের দল ভাঞ্চিত বহুজন আঘাদি সাথে থাকলে এনডিএ-কে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিত পারত বিরোধী জোট। বিহারে আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী আরো একটু নমনীয় হলে সুফল পেত ইনডিয়া জোট।
ভোটের ফলপ্রকাশের পর মঙ্গলবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় 'বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদি। তবে বিজেপি নয়, বক্তব্যে তিনি জোর দিয়েছেন এনডিএ জোটের ওপর। বক্তব্যে রাম মন্দিরের কোথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ আসনে বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিং সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদের কাছে হেরেছেন। উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদে কেন্দ্রের মধ্যেই রামমন্দির অবস্থিত।
লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন ও বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু সেই অযোধ্যাতেই হার স্বীকার করতে হয়েছে বিজেপিকে।
এদিকে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী মোদিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে, এই যুক্তিতে যে বিজেপি এবং তার সহযোগীরা ৩৭০টি আসন জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি, যা তাদের '৪০০-পার' (৪০০-এরও বেশি আসন) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এই খারাপ ফলাফল প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাসের প্রমাণ।
একই দাবি তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সরকার গঠনে লোকসভার ২৭২ আসনের জন্য শরিকদের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদিকে। বিজেপি নিজে থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জোট গঠনের আলোচনা করতে ফোন দিয়েছেন।