পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করবে রাশিয়া
রুশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেই কার্তাপোলভ বলেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রাশিয়া যদি মনে করে যে তার ওপর হুমকি বাড়ছে, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করবে।
১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর, প্রথমবারের মতো ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে।
গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়া তার সরকারি পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করতে পারে এবং কোন শর্তে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করতে পারে।
রোববার (২৩ জুন) রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান আন্দ্রেই কার্তাপোলভের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, হুমকি বাড়লে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরিবর্তন করা হতে পারে।
কার্তাপোলভকে উদ্ধৃত করে আরআইএ বলেছে, 'আমরা যদি দেখি যে চ্যালেঞ্জ এবং হুমকি বাড়ছে, তাহলে আমরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সময় এবং এই ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে (নীতি) কিছুটা সংশোধন করতে পারি।'
কার্তাপোলভ একসময় সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, পরমাণু নীতিতে সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন আনার বিষয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি।
রাশিয়ার ২০২০ সালের পরমাণু নীতিতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে কখন দেশটির প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করবেন: ব্যাপকভাবে পারমাণবিক বা অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র বা প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণের ফলে 'যখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে' এর প্রতিক্রিয়ায় এই অস্ত্র ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের মতে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু শক্তিধর দেশ, যাদের কাছে বিশ্বের ৮৮ শতাংশ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।
উভয়েই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ করছে এবং চীনও দ্রুত তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার বাড়াচ্ছে।
পুতিন এই মাসে বলেছেন, ইউক্রেনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
এটি এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের দেওয়া স্পষ্ট সংকেত যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাত (ইউক্রেন যুদ্ধ) পারমাণবিক যুদ্ধে গড়াবে না।
কট্টরপন্থিদের চাপ
তবে রাশিয়ার পরমাণু নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলেও জানান পুতিন।
তার এই কথাকে রাশিয়ার কট্টরপন্থিদের চাপের ফল হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
রুশ কট্টরপন্থিরা মনে করে, পুতিনের উচিত পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে আরও দ্রুত কাজ করা এবং এগুলো ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা কমানো।
পুতিন গত সপ্তাহে আরও বলেছিলেন, তাদের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করতে হতে পারে। কারণ রাশিয়ার প্রতিপক্ষরা অতি-অল্প-কার্যকরী পারমাণবিক ডিভাইস তৈরি করছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মস্কো ও ওয়াশিংটন উভয়ই তাদের অস্ত্রের সংখ্যা অনেক কমিয়েছে। এছাড়া স্নায়ুযুদ্ধের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং অনেক কূটনীতিক বলেছেন যে তারা এখন নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা করছেন, তাই নতুন ট্যাব খুলছেন।
চলতি মাসে হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ সহযোগী বলেন, রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য প্রতিপক্ষের ক্রমবর্ধমান হুমকি ঠেকাতে আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করতে হতে পারে।
রাশিয়া বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। তবে তা কেবল ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার অংশ হিসেবে।
দ্য ইউএস ২০২২ নিউক্লিয়ার পশ্চার রিভিউতে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও চীন উভয়ই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার তৈরি করছে, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে 'যুক্তরাষ্ট্রকে তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কৌশলগত প্রতিযোগী ও সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে দুটি প্রধান পারমাণবিক শক্তির মুখোমুখি হতে হয়।'
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি