ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ: বাইডেনের পরিবর্তে নতুন প্রার্থী দিতে ডেমোক্র্যাটদের যেসব উপায় আছে
আসছে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরমধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল– রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনপূর্ব বিতর্কও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিতর্কের প্রথম পর্বেই রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথার খেই হারিয়েছেন বয়োবৃদ্ধ জো বাইডেন। এ ঘটনায় নিজ দলের মধ্যেই তাঁর প্রার্থীতা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যে ৮১ বছর বয়সি জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। যেটা খুবই সঙ্গত, কারণ প্রথম মুখোমুখিতে ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছেন বাইডেন।
ট্রাম্প তো বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাঝেই খোঁচা মেরে বলেন, 'উনি কী বলেছেন আমি কিছুই বুঝিনি, এবং আমি নিশ্চিত উনি নিজেও বোঝেননি।'
প্রার্থীদের প্রথম বিতর্কের আগে থেকেই অনেক মার্কিনি বাইডেনের বয়স ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই ঘটনার পর যা আরও গভীর হয়েছে। ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে থেকেই বাইডেনকে বাদ দেওয়ার আহ্বান শোনা যাচ্ছে। তবে বাইডেনের সম্মতি ছাড়া সেটি করা খুবই কঠিন।
প্রভাবশালী যেসব ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা এর আগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাইডেনের প্রার্থিতাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, এখন তারাই দলের মধ্য থেকে বিকল্প প্রার্থীর আবেদন খুঁজছেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ক অনুষ্ঠানে বাইডেন যে শোচনীয় পারফর্ম করেছেন, তাতেই আস্থায় তাদের চিড় ধরেছে। ফলে সংকটকালীন বিকল্প হিসেবে, তাঁরা এমন প্রার্থী চাইছেন, ভোটারদের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।
বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনির্বাচিত হতে পারবেন না বলেই ধারণা তাঁদের।
ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় কমিটির সদস্য এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি বইয়ের লেখক এলিন কামারস্ক বলেন, "বাইডেন যদি নিজ থেকেই নির্বাচনী রেস থেকে সরে দাঁড়ান, সেটাই হবে সবচেয়ে সহজ পন্থা। এরপরেও কিছু নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা থাকবে, যেগুলো সম্পন্ন করার পর দল তাঁর জায়গায় নতুন (প্রেসিডেন্ট) প্রার্থী দিতে পারবে।"
তাঁর মতে, বাইডেনের অমত সত্ত্বেও তাঁকে প্রার্থিতা থেকে সরানো সম্ভব, তবে তাঁর জায়গায় বলিষ্ঠ প্রার্থীর অভাব থাকায়– এই প্রক্রিয়ায় এগোনো সম্ভব নাও হতে পারে।
বিতর্কে ভালো করতে না পারার বিষয়টি অবশ্য বাইডেন নিজেও স্বীকার করেছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইঙ্গিত বাইডেন দেননি। ট্রাম্পকে নির্বাচনে হারানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রতিনিধিদের বিদ্রোহ
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দলের প্রতিনিধিরা। এর আগে তাঁদের সমর্থন পেয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হন বাইডেন। বাইডেনকে সরাতেও এই প্রতিনিধিরা প্রধান ভূমিকা নিতে পারেন। তবে তাঁর মত না থাকলে, সেটা হবে আসুরিক এক প্রচেষ্টা।
মনোনয়নপত্রে নিজ নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হলে– ডেমোক্র্যাট দলের কনভেনশনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কোনো প্রার্থীকে অন্তত ৬০০ প্রতিনিধির সই নিতে হবে। তবে কোনো প্রদেশের প্রতিনিধিদের থেকে ৫০টির বেশি সই নেওয়া যাবে না। আলোচিত সংখ্যক প্রতিনিধিরা হলেন মোট প্রতিনিধিদের ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, ৯৯ শতাংশ প্রতিনিধির সমর্থন পেয়েছেন বাইডেন। ফলে বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ করতে হলে তাঁর অনুগত প্রতিনিধিদের সমর্থন বদলাতে রাজি করাতে হবে চ্যালেঞ্জকারীকে।
প্রতিনিধিদের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি নির্দলীয় পরামর্শক সংস্থা– এফএইচকিউ ট্র্যাটেজিস এর বিশেষজ্ঞ জশ পুটনাম বলেন, "এখানে প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়, তবে প্রতিনিধিরা যদি বিদ্রোহ করেন – তখন (বিকল্প প্রার্থীর মনোনয়ন লাভের) সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যাবে।"
ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিদের সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য হচ্ছে, "এদের বেশিরভাগই বাইডেনের কট্টর সমর্থক নন।" অর্থাৎ, বাইডেনের মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জকারী যথেষ্ট শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য হন– তাহলে প্রতিনিধিদের বড় অংশের সমর্থন তিনি পেতে পারেন।
এ সম্পর্কে আরও ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বাইডেনের প্রচার শিবির তাঁর কনভেনশনের ডেলিগেটদের আনুগত্য এর আগে যাচাই-ও করেছে। তবু তাঁদের মত-পরিবর্তনের সুযোগ আছে। ডেমোক্রেটদের নিয়ম হলো, প্রার্থীর পক্ষে ভোট বা সমর্থনদানকারী প্রতিনিধিদের সম্পূর্ণ সজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় তা দিতে হবে।
অন্যদিকে, দলীয় বিধান অনুসারে রিপাবলিকান প্রতিনিধিরা কেবল নির্দিষ্ট একজন প্রার্থীর পক্ষেই তাঁদের ভোট দিতে পারেন।
তবে বাইডেনের চেয়ে বেশি প্রতিনিধিদের সমর্থন লাভ সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদই এই চেষ্টা করবেন না। কারণ ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে দলীয় মনোনয়নচ্যুত করতে ব্যর্থ হওয়া রাজনীতিবিদরা দলের মধ্যে 'অচ্ছুতে' পরিণত হন।
এলিন কামারস্কের মতে, বেশিরভাগ রাজনীতিবিদের পক্ষেই এটা করে ওঠা সম্ভবও না।
উন্মুক্ত কনভেনশন
দলের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রতিনিধিদের উন্মুক্ত সম্মেলন আহ্বান করা যেতে পারে। বাইডেন স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হলে, বা এমনকী তিনি রাজি না থাকলেও– দল এই কনভেনশন ডাকতে পারে। তবে কয়েক দশকের মধ্যে আমেরিকার রাজনীতিতে এমনটা ঘটতে দেখা যায়নি।
প্রার্থীদের কারোরই যদি মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধির সমর্থন না থাকে, তাহলে এ ধরনের সম্মেলনের আহ্বান করা যায়। এতে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থী জয়ী হওয়ার আগপর্যন্ত যতগুলো দফায় প্রয়োজন– ভোটগ্রহণ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদি স্বেচ্ছায় নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান, বা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির সমর্থন হারান, সেক্ষেত্রে এ ধরনের উন্মুক্ত সম্মেলনের সুযোগ থাকবে।
এ ধরনের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে 'সুপার-ডেলিগেটদের' ভোট। এই প্রতিনিধিরা হলেন– দলের সেইসব নেতা বা নির্বাচিত কর্মকর্তা যারা নিজেদের পদাধিকার বলে প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। এ ধরনের প্রতিনিধির সংখ্যা হচ্ছে ৭০০ জন, ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন যদি দ্বিতীয় দফার এই ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে এদের অধিকাংশ যার পক্ষে ভোট দেবেন – প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।
ডেমোক্র্যাট দল যেকোনো মুহূর্তে মনোনয়নের বিধিমালা পরিবর্তন করলেও– বাইডেনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জকারীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে বা কমতে পারে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে তিনিও উপ-রাষ্ট্রপতি পদে ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়ছেন। তবে তাঁকে ছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসাম, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচান হুইটমার, ইলিনয়সের গভর্নর জে বি প্রিৎজকারের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছে।
মনোনয়নের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির তারিখ হচ্ছে আগামী ২১ আগস্ট। তবে ৭ আগস্টের আগেই একটি ভার্চুয়াল ভোটগ্রহণের সম্ভাবনা আছে বলেও জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট দলের ন্যাশনাল কংগ্রস (ডিএমসি)।
অনুবাদ: নূর মাজিদ