৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনা: ফৌজদারি জালিয়াতির অপরাধ স্বীকার করতে রাজি হয়েছে বোয়িং
অবশেষে আদালতে দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়েছে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৩৪৬ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হওয়ার পর একটি নিষ্পত্তি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করার প্রমাণ পাওয়ায়— ফৌজদারি জালিয়াতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হতে রাজি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর বিবিসি'র।
ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে) জানিয়েছে, উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে ২৪৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ফৌজদারি জরিমানা করতে হবে।
বোয়িং-এর বিরুদ্ধে দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনার সাথে সম্পর্কিত একটি নিষ্পত্তি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করার প্রমাণ পাওয়ায় মার্কিন বিচার বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার সুপারিশ করেছিলেন মার্কিন প্রসিকিউটররা। মার্কিন বিচার বিভাগকে বলা হয়েছিল আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বোয়িংকে বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা।
ফৌজদারি জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় বোয়িংয়ের সামনে দুটি পথ খোলা ছিল, হয় দোষ স্বীকার করা অথবা আদালতে ট্রায়াল বা বিচারের আওতায় আসা। শেষমেশ বোয়িং দোষ স্বীকার করতেই সম্মত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বোয়িং বলেছে, 'সুনির্দিষ্ট শর্তাবলী ও অনুমোদন সাপেক্ষে বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি সমাধানের শর্তে আমরা নীতিগতভাবে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছি'।
চুক্তি অনুযায়ী বোয়িংকে ২৪৩.৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হবে। একটি নিরপেক্ষ মনিটরিং টিম তিন বছরের জন্য বোয়িংকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখবে এবং বিমানের সেফটি প্রোগ্রামের জন্য (নিরাপত্তা কর্মসূচি) বোয়িংকে কমপক্ষে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয় করতে হবে। এছাড়াও এই চুক্তিটি একজন ফেডারেল বিচারকের অনুমোদনের পরই কার্যকর হবে।
বোয়িং ২০১৮ ও ২০১৯ সালের দুটি মারাত্মক ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান দুর্ঘটনায় ভুল তথ্য দিয়ে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এয়ার-সেফটি নিয়ন্ত্রকদের বিভ্রান্ত করেছে— এমন অভিযোগ আসার পর বোয়িং সেটি সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২১ সালে একটি নিষ্পত্তি চুক্তি করার পর ওইসময় ফৌজদারি অভিযোগ থেকে রক্ষা পায়।
চুক্তি অনুযায়ী, বিচার বিভাগ বোয়িং এর বিরুদ্ধে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাথে প্রতারণার অভিযোগে মামলা না করতে সম্মত হয়েছিল যদি সংস্থাটি বাহ্যিক নিয়ম ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ মেনে চলে এবং নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেয়।
কিন্তু এই বছরের জানুয়ারিতে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের সময় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের একটি দরজার প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনায় বোয়িংয়ের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করার বিষয়টি আবার ওঠে আসে এবং গত মে মাসে তদন্তের পর নিশ্চিত হন প্রসিকিউটররা।
বোয়িং ২০২১ সালে করা নিষ্পত্তি চুক্তির শর্তাবলি অনুসরণ করার দাবি জানিয়ে বিচার বিভাগের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
বোয়িং ধারণা করছে দোষ স্বীকারের পর সংস্থাটির ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে তাদের সামরিক বিমান তৈরির চুক্তি থাকায়। সাধারণত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি রেকর্ড থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি চুক্তি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে বোয়িংয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।
এদিকে নিহতদের পরিবারের আইনজীবী পল ক্যাসেল বলেন, এই জরিমানা যথেষ্ট নয়, ৩৪৬ জন যাত্রীর মৃত্যু আরও ন্যায়বিচারের দাবি রাখে। গত জুনে সরকারকে লেখা এক চিঠিতে তিনি ডিওজেকে বোয়িংকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি জরিমানা করার আহ্বান জানান।
ফাউন্ডেশন ফর এভিয়েশন সেফটির নির্বাহী পরিচালক ও বোয়িংয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক এড পিয়েরসন এই রায়কে 'হতাশাজনক' এবং 'অন্যায্য' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, 'দোষী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার পরিবর্তে, তাদের জেল থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে'।
দুটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের পৃথক কিন্তু প্রায় একই রকম দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন্য নিহত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পরে জাভা সাগরে প্রথম বোয়িং বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরে লায়ন এয়ারের একটি ফ্লাইটে থাকা ১৮৯ জনের সবাই মারা যায়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে উড্ডয়নের ছয় মিনিট পরে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১৫৭ জনের সবাই মারা যায়। দুটি দুর্ঘটনার জন্যই ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম দায়ী ছিল।