আম্বানিপুত্রের বিয়েতে যান চলাচলে বিধিনিষেধ, ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন চাকরিজীবীরা, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়েতে চাঁদের হাট বসেছে। মুম্বাইয়ে শুক্রবার (১২ জুলাই) বসছে অনন্ত অম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের আসর। কিম ও ক্লোয়ি কার্দাশিয়ান, মাইক টাইসনের মতো বিনোদন জগতের তারকা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক বিজনেস টাইকুনরা পর্যন্ত সবাই-ই আছেন অতিথির তালিকায়।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়েতে নিমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও টনি ব্লেয়ার, সামস্যাং ইলেক্ট্রনিকসের চেয়ারম্যান যে লি, এইচএসবিসি হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান মার্ক টাকার প্রমুখ। তালিকায় আরও আছেন সৌদি আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমিন নাসে, ওষুধশিল্পের জায়ান্ট জিএসকে-র এমা ওয়ামস্লে, ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিও।
কয়েক মাসব্যাপী চোখধাঁধানো প্রি-ওয়েডিং অনুষ্ঠানের পর শুক্রবার অনন্ত ও রাধিকা গাঁটছড়া বাঁধবেন মধ্য-মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে। অনুষ্ঠানে হাজির হবেন প্রায় ১,২০০ অতিথি। তাদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরাও। মুম্বাইয়ের বেশিরভাগ বিলাসবহুল হোটেলই বুক হয়ে গেছে অতিথিদের থাকার জন্য।
টাকার কুমির ও বিখ্যাত মানুষদের সমাগমের মধ্যেই সন্তানদের মধ্যে সম্পদ হস্তান্তর শুরু করবেন আম্বানি। ২৯ বছর বয়সি বর অনন্ত দায়িত্ব পাবেন রিলায়েন্সের সবুজ জ্বালানির ব্যবসার। একমাত্র কন্যা ইশা আম্বানি রিটেইল ব্যবসার দেখাশোনা করেন। আর বড় ছেলে আকাশ আছেন রিলায়েন্সের ডিজিটাল উদ্যোগ দেখভালের দায়িত্বে।
অনন্ত ও রাধিকার বিয়ে রীতিমতো রাজকীয় উৎসবে পরিণত হলেও এসব অনুষ্ঠান নিয়ে তিতিবিরক্ত স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ও অফিসকর্মী। কারণ, একের পর এক রাজকীয় অনুষ্ঠানের ঠেলায় অস্থির তারা।
মুম্বাইয়ের অভিজাত বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্সের জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে বসবে বিয়ের আসর। নগর কর্তৃপক্ষ ১২ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ভেন্যুর আশপাশে যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। অথচ এটিই মুম্বাইয়ের আর্থিক রাজধানী। বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে আছে ভারতের সবচেয়ে বড় স্টক এক্সচেঞ্জ ও অনেকগুলো বিদেশি ব্যাংক। তাই সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করে দেওয়ায় তারা রীতিমতো বিরক্ত।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণ মানুষকে এত ভোগান্তিতে ফেলছে কেন সরকার।
এ অঞ্চলের ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, শুক্রবার তারা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবেন, অথবা অন্য কোনো জায়গায় বসে অফিসের কাজ করবেন। চলতি সপ্তাহে ভিজিটরদের অফিসে আসতেও মানা করে দিয়েছেন তারা। এছাড়া শুক্রবার এ এলাকার সিংহভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় অবসর কাটানোর জন্যও অন্য জায়গা খুঁজে নিতে হচ্ছে তাদের।
জিও ওয়ার্ল্ড কমপ্লেক্সে আরও অনেক অফিস আছে। আম্বানি-তনয়ের বিয়ের উৎসব ঘিরে এমন সব এলাহি আয়োজন চলছে যে ওইসব অফিসের কাজকর্মও বলতে গেলে শিকেয় উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কমপ্লেক্সের অনেক অফিসই আম্বানিদের বিয়ের উৎসব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মীদের ঘরে বসেই কাজ করতে বলেছে।
শুধু জিও ওয়ার্ল্ড কমপ্লেক্স নয়, ওই এলাকার আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের ১৫ জুলাই পর্যন্ত ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে বলেছে। কারণ বিয়েতে যত সংখ্যক অতিথি আসবে, তাতে গোটা এলাকায় যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাব বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া দোকানপাটও বন্ধ থাকবে।