যুক্তরাষ্ট্রের বানানো ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান মোতায়েন ইউক্রেনের, কতখানি চ্যালেঞ্জের মুখে রাশিয়া?
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান পেয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর দেশটির বহরে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রোববার জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে দেশটির বিমানবাহিনী।
ইউক্রেনের অজ্ঞাত একটি বিমানঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'এফ–১৬ এখন ইউক্রেনে। আমরা এটা পেয়েছি। আমি আমাদের পাইলটদের জন্য গর্বিত যারা এই জেটগুলো আয়ত্ত করতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ইতিমধ্যে আমাদের দেশ রক্ষায় ব্যবহার করছেন'।
যুদ্ধবিমানগুলো ইউক্রেনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলেও মোট কতটি যুদ্ধবিমান পাওয়া যাবে এবং এগুলোর যুদ্ধে কেমন প্রভাব রাখবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আগামী মাসগুলোয় ইউক্রেনের বহরে আরও কয়েকটি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান যুক্ত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছে দেশটি। তবে জেলেনস্কি এটাও স্বীকার করেছেন যে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান চালানোর মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষিত পাইলট এখনও তাদের নেই।
ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এবং নরওয়ে ইউক্রেনে প্রায় ৮০টি বিমান পাঠাতে সম্মত হয়েছে, যদিও ২০২৫ সালের আগে পুরো চালান হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এবং নরওয়ে ইউক্রেনে প্রায় ৮০টি বিমান পাঠাতে সম্মত হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইউক্রেনকে এফ-১৬ দেয়নি। তারা প্রথমে এই যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসে। এ দুই দেশ প্রথম চালানের এফ-১৬ ইউক্রেনে পাঠিয়েছে।
এফ-১৬ চালানোর জন্য সাধারণত তিন বছরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে ইউক্রেনের ফাইটার পাইলটদের ৯ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তবে এফ-১৬ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখছে কিয়েভ। রোববার জেলেনস্কি উল্লেখ করেছেন, এফ-১৬ কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা প্রকাশ করা 'বিপজ্জনক'।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত হতে পারে, যা দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ দখলকারী রুশ বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো মাইকোলা বিয়েলিয়েসকভ বলেন, ইউক্রেন এখন যে এফ-১৬ মডেল পাচ্ছে তা সোভিয়েত আমলের জেটগুলোর চেয়ে অনেক উন্নত। তবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে এই এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে গেম-চেঞ্জার হিসেবে দেখা উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর একটা কারণ হচ্ছে জেটের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত, ইউক্রেন কেবল কয়েকটি এফ-১৬ হাতে পেয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ মোট ২৪টি বিমান ইউক্রেনের বহরে যুক্ত হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়ার বিমানশক্তিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে ইউক্রেনের অন্তত ১২৮টি এফ-১৬ জেটের প্রয়োজন হবে।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় এফ-১৬ বিমানের জন্য অস্ত্রের সরবরাহ পাওয়াও ইউক্রেনের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিয়েলিয়েসকভ বলেন, এফ-১৬ দিয়ে ইউক্রেনের দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা থাকবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে এমন প্রতিবেদন রয়েছে।
এফ-১৬ আসার আগে এতদিন সোভিয়েত আমলের পুরোনো যুদ্ধবিমান দিয়ে রাশিয়ার অত্যাধুনিক সুখোই বিমানের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেনীয় এফ-১৬ একা রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে সাফল্য আনতে পারবে না, তবে সঠিক কৌশল, সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণের সাথে ব্যবহার করা হলে ইউক্রেনের সীমান্ত প্রতিরক্ষা এবং বিমানবাহিনীর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন