শেখ হাসিনা কোথায় যাবেন? দিল্লির পর তার সামনে এখন কী বিকল্প খোলা আছে?
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ৫ আগস্ট। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি ঢাকা ছেড়ে ভারতের দিল্লিতে চলে যান।
তবে শেখ হাসিনার নতুন ঠিকানা কোথায় হবে— তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ৭৬ বছর বয়সী হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু লন্ডন এ ব্যাপারে দ্বিধায় থাকায় তিনি অন্য বিকল্পের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনার ছেলে যা বললেন
এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, তার মা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন— এমন খবরগুলো ভুল।
জয় বলেন, "তিনি কোথাও আশ্রয়ের আবেদন করেননি। তাই যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাওয়ার খবর এখনও সত্য নয়। আমার মা এই মেয়াদের পরে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আর আগ্রহী নন।"
যুক্তরাজ্য যা বলছে
শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক। রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন রাজনীতিবিদ এবং কেয়ার স্টারমার সরকারের একজন মন্ত্রী।
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সহ উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে যুক্তরাজ্যের। তাই শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই একাধিক প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তিনি যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের হোম অফিস এনডিটিভিকে জানিয়েছে, ব্রিটিশ অভিবাসন নীতি যুক্তরাজ্যের বাইরের লোকেদের আশ্রয় বা অস্থায়ী আশ্রয় দাবি করার অনুমতি দেয় না। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, আশ্রয়প্রার্থী নিরাপদে প্রথমে যে দেশে পৌঁছায়, সেখানে আবেদন করা উচিত; যেটি এই ক্ষেত্রে ভারত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বিকল্প হতে পারে?
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তবে হাসিনা এবং বাইডেন প্রশাসনের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন হয়, বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরে এবং জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঠিকভাবে নিশ্চিত করতে না পারার অভিযোগ আনার পরে।
যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে। তবে এই ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিসার রেকর্ডগুলো তাদের গোপনীয় বিষয়।
এর আগে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হতাহতের ঘটনাকে উল্লেখ করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, "আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যে কোনও পরিবর্তনের আহ্বান জানাই।" .
ভারত এ ব্যাপারে কী বলছে?
শেখ হাসিনা সোমবার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনা খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে তার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা এখনো কিছুটা হতবিহ্বল অবস্থায় থাকায় ভারত সরকার এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে তাকে স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় দিয়েছে।
নয়াদিল্লিও এখানে একটি কূটনৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়েছে। ভারত ক্ষমতাচ্যুত হাসিনাকে খুব জোরালোভাবে সমর্থন করার বিষয়টি এড়াতে চায় কারণ এটি নতুন বাংলাদেশী সরকারের সাথে সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে, যা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
উপরন্তু, শেখ হাসিনার সাথে দেশটির একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে যেহেতু ১৯৭৫ সালে তার পরিবার নিহত হওয়ার পর ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের অতীত সম্পর্কের কারণে ভারতের পক্ষে এখন হাসিনাকে পরিত্যাগ করা কঠিন হয়ে উঠেছে।