স্টারমার-বাইডেন বৈঠক: ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশ্রুতি নেই
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। খবর বিবিসি'র।
স্টারমার জানিয়েছেন, বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা ছিল দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ। আলোচনায় ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তবে ইউক্রেনকে রাশিয়ায় দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, তারা রাশিয়ায় ইরান ও উত্তর কোরিয়ার প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দিলে তা যুদ্ধে ন্যাটোর সরাসরি অংশগ্রহণ হিসেবে গণ্য হবে।
তার এই মন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনের সামরিক কার্যক্রম সীমিত করার জন্য চাপ প্রয়োগের অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি কূর্ত ভোলকার বিবিসির 'টুডে' প্রোগ্রামে মন্তব্য করেছেন যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মন্তব্য মূলত পশ্চিমা দেশগুলোকে আরও পদক্ষেপ নিতে নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে। ভোলকার বলেন, "পুতিন এই কথা বলছেন যাতে আমাদের কিছু করতে নিরুৎসাহিত করা যায়—এই মন্তব্য তার আসল পরিকল্পনা বা চিন্তাধারা সম্পর্কে কোনো বাস্তব তথ্য দেয় না।"
বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন, "ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবছি না"। তিনি এবং স্টারমার আশা করছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা হবে।
যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য কোনো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছেন, তার মতে এটি-ই যুদ্ধের সমাপ্তির একমাত্র উপায়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পূর্ণ আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে, ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদিন বোমাবর্ষণ চালাচ্ছে রাশিয়া।
রাশিয়ার বিমান থেকে ছোড়া অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড বোমা ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা, আবাসিক ভবন, জ্বালানি অবকাঠামো এবং হাসপাতালগুলোতে আঘাত হানছে। কিয়েভের দাবি, এসব হামলার উৎসস্থলে আঘাত করার অনুমতি না থাকায় তাদের আত্মরক্ষা সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য আগে জানিয়েছিল যে, শুধু স্টর্ম শ্যাডো বাদে ব্রিটিশদের দেয়া অন্য সকল অস্ত্র আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেন। সেসব অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হবে না। তবে স্টর্ম শ্যাডো দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অনুমতি নেই তাদের।
এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদান করেছে, তবে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহার করার জন্য অনুমোদিত নয়। অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের মতো, যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়ার ভেতরে আঘাত হানার অনুমতি দেয়নি।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন এফ. কির্বি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব সহকারেই নিচ্ছে, কারণ তিনি এর আগেও আগ্রাসী এবং উত্তেজক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তবে, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে বাইডেনের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। কির্বি বলেন, "রাশিয়ার ভেতরে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা অপরিবর্তিত এবং এ নিয়ে বড় কোনো ঘোষণা আশা করা উচিত নয়।"
পুতিনের ন্যাটোর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের হুমকি নিয়ে কি তিনি ভয় পেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ সমাধানের দ্রুততম উপায় হলো পুতিনের কাজের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেওয়া।
স্টারমার আরও বলেন, বাইডেনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে কৌশলগত আলোচনা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিতে নয়।
বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হয়েছে, যা প্রায় এক বছর ধরে চলছে। এছাড়া, অন্যান্য বৈশ্বিক বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে।
অন্যদিকে, শুক্রবার মস্কো ছয়জন ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলেছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে। তবে, যুক্তরাজ্য এসব অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জাস্টিন ক্রাম্প বলেছেন, পুতিন নতুন ব্রিটিশ সরকার ও বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনকে পরীক্ষা করছেন।
তিনি বলেন, "রাশিয়া ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রতিপক্ষদের অস্ত্র সরবরাহ এবং ন্যাটো সদস্যদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, তথ্য চালনা, সাইবার হামলা এবং অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।"
ক্রাম্প আরও যোগ করেন, "রাশিয়া ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধানোর সামর্থ্য রাখে না, কারণ তারা শুধু ইউক্রেনের সঙ্গেই যুদ্ধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।"
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন