ইউক্রেন ‘ধ্বংস’ হয়ে গেছে, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো দরকার ছিল না: ট্রাম্প
ইউক্রেনের জনগণ এখন 'মৃত' এবং তাদের দেশ 'ধ্বংস' হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার উত্তর ক্যারোলিনায় এক অনুষ্ঠানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার হতাশা ব্যক্ত করে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এই মন্তব্যের পর, ভবিষ্যতে যদি ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে তিনি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার সময় কতটা ছাড় দেবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রাম্পের মতে, ইউক্রেনের উচিত ছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সমঝোতা করা। তিনি বলেন, "সবচেয়ে খারাপ চুক্তিও এখনকার পরিস্থিতির চেয়ে ভালো হতো।"
ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে এসেছেন ট্রাম্প। এনিয়ে তিনি বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে রাশিয়া কখনই আক্রমণ করত না এবং পুনরায় হোয়াইট হাউসে গেলে তিনি এ যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।
যদিও এত বিশদভাবে ট্রাম্পকে আগে কখনো এই সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়নি। এই মাসের শুরুর একটি বিতর্কেও ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেননি তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান কি না।
গত মঙ্গলবার, ট্রাম্প রাশিয়া ও এর পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক শক্তি নিয়ে কথা বলার সময় বলেন, যুদ্ধ তাদের 'স্বভাবজাত'।
এদিকে, এই সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে আসা জেলেনস্কি, দ্য নিউ ইয়র্কারকে বলেন, ট্রাম্পের রানিং মেট জে.ডি. ভ্যান্স 'অত্যন্ত চরমপন্থি', কারণ তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু অঞ্চল সঁপে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প "যুদ্ধ থামানোর উপায় ভালোভাবে জানেন না, যদিও তিনি মনে করেন তিনি জানেন।"
জবাবে ট্রাম্প বলেন, "এটি একটি জরুরি আলোচনার বিষয়। কারণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশে আছেন এবং তিনি আপনাদের সবার প্রিয় প্রেসিডেন্টকে (নিজেকে ইঙ্গিত) নিয়ে কিছু খারাপ মন্তব্য করছেন।"
ট্রাম্প ইউক্রেনকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত দেশ হিসেবে চিত্রিত করেন, বিশেষ করে রাজধানী কিয়েভের বাইরের পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি বলেন, সেখানে সৈন্যের অভাব রয়েছে এবং যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে বা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ইউক্রেন কি যুদ্ধ শেষ করার জন্য কোনো সুবিধা বা শক্তি এখনও রাখে?
ট্রাম্প বলেন, "যে কোনো চুক্তি, এমনকি সবচেয়ে খারাপ চুক্তিও, এখনকার পরিস্থিতির চেয়ে ভালো হতো। তারা হয়ত কিছুটা হারাত, কিন্তু সবাই বেঁচে থাকতো, ভবনগুলো গড়ে উঠতো আর টাওয়ারগুলো আরও দুই হাজার বছর ধরে টিকে থাকত।"
তিনি আরও বলেন, "এখন কোনো চুক্তি সম্ভব? সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ মারা গেছে। দেশটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।"
এদিকে, জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে তার যুদ্ধ 'জয়ের পরিকল্পনা' নিয়ে আলোচনা করবেন। রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে দূর-পাল্লার পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে আক্রমণের অনুরোধ চাইতে পারেন তিনি।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেন ধারণার চেয়েও বেশি সফলভাবে লড়াই ও প্রতিরোধ করেছে। সংঘাতে দেশটি তার এক-পঞ্চমাংশ ভূমি এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণ হারিয়েছে।
ট্রাম্প এই সংঘাতের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাইডেন 'সবকিছু উসকে দিয়েছে'।
"বাইডেন এবং কমলা-ই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। জেলেনস্কিকে এত টাকা ও অস্ত্র দিয়ে আগে কখনো কোনো দেশ সহায়তা করেনি," বলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প পুতিনের হামলার কারণ নিয়ে তেমন কথা বলেননি, কিন্তু দাবি করেন, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট হতেন, তাহলে পুতিন যুদ্ধ শুরু করতেন না। তিনি পুতিন সম্পর্কে বলেন, "তিনি দেবদূত নন।"
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন