পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিতে পরিবর্তনের প্রস্তাব পুতিনের, পশ্চিমাদের জন্য হুমকি!
রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর বিবিসির
তিনি জানান, এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী কোনো রাষ্ট্র-সমর্থিত— পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ওপর আক্রমণকে উভয় শক্তির 'যৌথ আক্রমণ' হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
রাশিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার রাতে এ মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তার সরকার পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের বিধিমালা ও শর্তাবলীতে এ পরিবর্তন আনতে পারে বলে এসময় জানান তিনি।
এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে তার এই ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারবে। কারণ ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী না হলেও– যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলো কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে।
যুদ্ধের ডামাডোল ইতোমধ্যেই গড়িয়েছে রুশ ভূখণ্ডের ভেতরে। রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে পশ্চিমা অস্ত্রের জোরে আগ্রাসন চালিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তারা রাশিয়ার আরো ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাতে চায়। এজন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চাইছে কিয়েভ।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে চলতি সপ্তাহে দেশটিতে সফর করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্র সময় বৃহস্পতিবার বাইডেনের সাথে তার বৈঠকের কথা রয়েছে। এই বৈঠকে অনুমতি চাওয়ার বিষয়টিই মূল বিষয়বস্তু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুতিনের এই বক্তব্যের এই প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান (চিফ অব স্টাফ) অ্যান্ড্রি ইয়েরমাক বলেছেন, বিশ্বকে ভয় দেখানোর জন্য পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করা ছাড়া রাশিয়ার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এর আগেও বেশ কয়েকবার এই মারণাস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন। যেটিকে 'পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি' প্রদান বলে বরাবর নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেন। কিয়েভ বলেছে, পশ্চিমা মিত্ররা যেন ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা না দেয়– সেজন্যই এমন হুমকি দেয় রাশিয়া।
পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের বিষয়ে বরাবরই মস্কোকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন। এশীয় পরাশক্তিটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পুতিনকে এই অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কও করেছেন।
তবে বুধবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সাথে এক বৈঠকের পরে অস্ত্র ব্যবহারের নীতিটি সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানান পুতিন।
পুতিন বলেন, নতুন নিউক্লিয়ার ডকট্রিন রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শর্তাবলীতে স্পষ্ট রুপান্তর ঘটাবে। বিশেষত, মস্কোর বিরুদ্ধে প্রচলিত (পারমাণবিক ওয়্যারহেড যুক্ত নয়) মিসাইল ব্যবহারের মতো পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও (পাল্টা জবাব দিতে) এর ব্যবহার করা যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়া যদি তার ভূখণ্ডের দিকে ধাবমান বিপুল পরিমাণ মিসাইল, যুদ্ধবিমান ড্রোন শনাক্ত করে— তখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকবে। কারণ এই ধরনের আক্রমণ হবে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর 'গুরুতর হুমকি'।
মূলত এবিষয়েই তিনি বলেছেন যে, "পারমাণবিক অস্ত্রধারী একটি রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বা সমর্থনে— পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী নয় এমন কোনো দেশের রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত আক্রমণকে – রাশিয়ান ফেডারেশনের ওপর করা তাঁদের যৌথ আক্রমণ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।"
রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে পারমাণবিক অস্ত্র তার দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা গ্যারান্টি বলেও মন্তব্য করেন ক্রেমলিন অধিপতি।