লেবাননে ইসরায়েলের যেকোনো স্থল আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রস্তুত হিজবুল্লাহ: উপপ্রধান শেখ নাঈম
নিজেদের নেতা এবং বহু সিনিয়র কমান্ডার নিহত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপপ্রধান শেখ নাঈম কাসেম।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক ভাষণে শেখ নাঈম কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতায় আঘাত করতে পারেনি ইসরায়েল।
সম্প্রতি লেবাননে বোমাবর্ষণের ফলে বিপর্যয় সত্ত্বেও তিনি জোর দিয়ে বলেন, তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
কাসেম জোর দিয়ে বলেন, গত শুক্রবার নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হলেও আগের গতিতেই এখনও হিজবুল্লাহর অভিযান চলছে।
তিনি আরও বলেন, 'অভ্যন্তরীণ বাছাইপ্রক্রিয়ার' সাহায্যে শিগগিরই নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে হিজবুল্লাহ।
কাসেম বলেন, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
'প্রস্তুত রয়েছি'
কাসেম বলেন, 'আমরা প্রস্তুত। ইসরায়েলিরা যদি স্থলপথ দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে চায়, তা মোকাবিলায় প্রতিরোধ বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।'
তিনি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য লেবাননে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আগ্রাসন ও গণহত্যার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। তবে হিজবুল্লাহ তার মূল লক্ষ্য নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, লেবাননের সব এলাকায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে, যতক্ষণ না পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে, তারা হামলা থামাচ্ছে না। বেসামরিক মানুষ, অ্যাম্বুলেন্স, শিশু ও বয়স্কদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তারা যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করে না, শুধু গণহত্যা করে।
কাসেম সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক- সীমাহীন সামরিক সহায়তার মাধ্যমে ইসরায়েলের অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
ভিডিও বার্তার শেষে হিজবুল্লাহ'র উপ-প্রধান বলেন, 'আমরা জিতব, যেমনটা ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে জিতেছিলাম।'
বৈরুত থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক জেইনা খোদর বলেন, কাসেমের বার্তার উদ্দেশ্য ছিল লেবাননের শিয়া জনগণকে আশ্বস্ত করা, যারা নাসরুল্লাহকে হারানোর পর দুর্বল বোধ করছে।
খোদর বলেন, 'তিনি তার জনগণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন যে হিজবুল্লাহর এখনও লড়াই করার মতো সামরিক সক্ষমতা রয়েছে এবং ইসরায়েলকে জানালেন যে তারা আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত নয়।'
তবে খোদর এটাও উল্লেখ করেছেন যে, ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার ঢেউ হিজবুল্লাহর নেতৃত্বকে ধ্বংস করার পর এবার তাদের পুনরায় সংগঠিত হওয়া জরুরি।
এছাড়াও তারা তাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে কি না এবং করলেও কীভাবে ব্যবহার করবে, যারা ইতোমধ্যে লেবাননে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে, হিজবুল্লাহকে এই বিষয়গুলো মূল্যায়ন করতে হবে।
খোদর বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে হিজবুল্লাহ যদি ইসরায়েলের জনবহুল এলাকাগুলোতে হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে- কার্পেট বোমা হামলা?
গত দুই সপ্তাহে লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে ইসরায়েল তার উত্তর সীমান্তের দিকে মনোনিবেশ করার পরে নাটকীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহর সাথে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলের সংঘাত হয়েছে।
লেবাননে আগ্রাসনের পেছনে ইসরায়েলের ঘোষিত উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিককে তাদের বাড়িঘরে ফেরানো।
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানে, যার মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ডিভাইসের বিস্ফোরণ, ৩৯ জন নিহত এবং হাজার হাজার আহত হওয়া এবং পরবর্তীতে নাসরুল্লাহকে হত্যায় সফল হওয়া ইসরায়েলের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে যে তারা লেবাননে তাদের দীর্ঘকালীন শত্রুকে ধ্বংস করতে পারবে।
তবে লেবাননে হামলা জোরদার করার পর সোমবার প্রথমবারের মতো ইসরায়েল রাজধানী বৈরুতের একটি কেন্দ্রীয় এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যা সর্বাত্মক যুদ্ধের ব্যাপারে আরও জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সতর্ক অবস্থানে ইরান
লেবাননকে রক্ষায় হিজবুল্লাহর দৃঢ়তা ও সক্ষমতা মূলত ইরান সমর্থিত ছিল। তবে ইরানকে এখন ইসরায়েলের সাথে যে কোনো সরাসরি সংঘর্ষের মাধ্যমে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ সৃষ্টির ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক বলে মনে হচ্ছে।
লেবানন ও গাজার ওপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও তেহরান এই দুই স্থানে কোনো সেনা মোতায়েন করবে না বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বাড়তি বা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। লেবানন ও ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের 'আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার ক্ষমতা ও শক্তি আছে'।
অন্যদিকে, লেবাননে ইসরায়েলি স্থল হামলার ঝুঁকি টের পাওয়া মাত্র লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, লিতানি নদীর দক্ষিণে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র উপস্থিতি নস্যাৎ করে, ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বৈরুত দেশের দক্ষিণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতেও প্রস্তুত।
মিকাতি বলেন, লেবানন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ১৭০১ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে এবং নদীর দক্ষিণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে প্রস্তুত। ওই স্থানটি লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (২০ মাইল) দূরে অবস্থিত।