এ বছর সবচেয়ে কম বিয়ের রেকর্ড গড়বে চীন
চীনে এই বছর নতুন বিয়ের সংখ্যা দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড সর্বনিম্ন হতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি দেশের জনসংখ্যাগত সংকটের কারণে হচ্ছে। কিন্তু সরকার বিয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিয়ে ও সন্তান জন্মের সংখ্যা কমে যাওয়া বেইজিংয়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে আসা এবং বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
২০২৪ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে প্রায় ৪.৭৪ মিলিয়ন চীনা দম্পতি তাদের বিয়ে রেজিস্টার করেছেন। এটি গত বছরের একই সময়ে ৫.৬৯ মিলিয়নের তুলনায় ১৬.৬ শতাংশ কম। এই তথ্যটি শুক্রবার দেশটির নাগরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে।
২০১৩ সাল থেকেই চীনে বিয়ের সংখ্যা কমে আসছে। চীনা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৪ সালে বিয়ের সংখ্যা ২০২২ সালের রেকর্ড সর্বনিম্ন ৬.৮৩ মিলিয়নের থেকেও কম হবে।
গত বছর কঠোর কোভিড নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর বিয়ের সংখ্যা বাড়ানো একটি অস্বাভাবিক ঘটনা, যা মূলত চাহিদার কারণে হয়েছে।
চীনের জনসংখ্যা দুই বছর ধরে কমছে এবং গত বছর জন্মের হার ছিল ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে কম। ২০২২ সালে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়।
চীনা কর্মকর্তারা মনে করেন, বিয়ের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং জন্মের হার কমার মধ্যে একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। দেশের সামাজিক নীতি এবং সরকারি নিয়মগুলো একক দম্পতিদের জন্য সন্তান জন্মদানকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে।
এই পতন রোধ করতে, চীনা কর্মকর্তারা তরুণদের বিয়ে এবং সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। যেমন, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রচারাভিযান।
কর্মকর্তারা 'ব্লাইন্ড ডেটিং ইভেন্ট', গণ বিয়ে এবং গরিব পুরুষদের জন্য বিয়ে কঠিন করে দেয়া "ব্রাইড প্রাইস" [বিবাহের জন্য পাত্রীকে বাবার পরিবারকে যে অর্থ প্রদান করতে হয়] এর প্রথা কমানোর চেষ্টা করছেন।
২০২২ সাল থেকে চীনের পরিবার পরিকল্পনা সমিতি "নতুন যুগের বিয়ে এবং সন্তান জন্মদান সংস্কৃতি" গড়ে তোলার জন্য পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। তারা "সন্তান জন্মদানের সামাজিক মূল্য" প্রচার এবং তরুণদেরকে "যথাযথ বয়সে" বিয়ে এবং সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন শহরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত এই নীতিগুলো চীনের তরুণদের বিয়ে করতে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা উচ্চ বেকারত্ব, বাড়তে থাকা জীবনযাত্রার খরচ এবং অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে শক্তিশালী সামাজিক সহায়তার অভাবের কারণে বিয়ে ও সন্তান জন্মদান স্থগিত করছে।
বিয়ের এবং জন্মের সংখ্যা কমার একটি কারণ কয়েক দশক ধরে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রণীত বিভিন্ন নীতি। এর ফলে বিয়ের উপযুক্ত বয়সী যুবকদের সংখ্যা কমে গেছে বল জানিয়েছেন চীনা কর্মকর্তারা এবং সমাজবিজ্ঞানীরা।
২০১৫ সালে চীন কয়েক দশক ধরে চলা একক সন্তান নীতির অবসান ঘোষণা করে এবং দম্পতিদের দুই সন্তান ধারণের অনুমতি দেয়। পরে ২০২১ সালে এটি তিন সন্তান পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু বিয়ে এবং জন্মের হার অব্যাহতভাবে কমতে থাকে।
এই স্থিতিশীল পতনের পেছনে বিয়ের প্রতি পরিবর্তিত মনোভাবও একটি কারণ। বিশেষ করে শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন তরুণ মহিলাদের মধ্যে।
কর্মস্থলে ব্যাপক বৈষম্য এবং পিতৃতান্ত্রিক প্রথার মুখোমুখি হয়ে [যেমন মহিলাদেরকে শিশুর যত্ন নিতে হবে এবং গৃহকর্মের জন্য দায়ী থাকা প্রত্যাশা] কিছু নারী বিয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছেন।
২০২১ সাল থেকে চীন বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদনকারী দম্পতিদের জন্য ৩০ দিনের "কুলিং-অফ" সময়কাল নির্ধারণ করেছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলা হয়েছে, এটি নারীদের জন্য অশান্তি বা অত্যাচারী বিয়ে থেকে বের হয়ে আসা কঠিন করে তুলতে পারে।
এই বছরের প্রথম নয় মাসে প্রায় ১.৯৬ মিলিয়ন দম্পতি বিচ্ছেদের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এটি গত বছরের তুলনায় ৬ হাজার কম।
চীন একমাত্র দেশ নয়, যেটি বিয়ে এবং জন্মের হার কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াও জন্ম হার বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনা, নগদ ভাউচার, আবাসন সহায়তা এবং শিশুদের যত্ন সহায়তা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের সাফল্য সীমিত।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়